হলিউডের জন্য গত বছর পার করার মন্ত্র ছিল ’২৫ পর্যন্ত অপেক্ষা। কেননা ২০২৪ সাল হলিউড পার করেছে আশাহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। সিনেমা এসেছে, কিন্তু বক্স অফিসে চলেনি। যেসব সিনেমা নিয়ে আশা বেশি ছিল, সেগুলোই বিশেষ করে মার খেয়েছে। সুতরাং ২০২৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করারই দরকার ছিল ইন্ডাস্ট্রির। সেটাই করেছে তারা। কেননা এ বছর মুক্তির অপেক্ষায় আছে বেশকিছু সিনেমা। গত বছর হলিউডে লেখক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতাদের ধর্মঘটের কারণে সিনেমার কাজ পিছিয়েছে এবং সেই সঙ্গে পিছিয়েছে মুক্তি। বেশকিছু ভালো সম্ভাবনাময় সিনেমা থাকছে ২০২৫ সালে।
বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকছে এ বছরের জন্য। পৃথিবীর শক্তিশালী নায়করা (অ্যাভেঞ্জার্স) সফলভাবে ফিরবেন? ইথান হান্টের স্টান্ট মুগ্ধ করবে? তারকাশক্তি দিয়ে দর্শককে আবারো থিয়েটারে ফেরাবেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, ব্র্যাড পিট ও ডোয়েইন জনসন? এর মধ্যে বেশকিছু সিনেমার সাফল্য নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি নিশ্চিত। যেমন ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’, ‘দ্য কনজুরিং: লাস্ট রাইটস’, ‘উইকেড: ফর গুড’, ‘জুটোপিয়া টু’, ‘টোয়েন্টি এইট ইয়ারস লেটার’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ ইত্যাদি।
জুলাইয়ে মুক্তি পাচ্ছে ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’। সিনেমাটিতে অভিনয় করবেন স্কারলেট জোহানসন ও জোনাথন বেইলি। ৩২ বছর পুরনো এ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি দর্শকের আগ্রহ সবসময়ই ছিল। এবারের সিনেমাটিও ভালো করবে বলে মনে করেন সবাই। একই মাসে মুক্তি পাবে ‘দ্য ফ্যান্টাস্টিক ফোর’। এমসিইউয়ের সঙ্গে যুক্ত এ সিনেমা নিয়েও দর্শকের আগ্রহ বহু দিনের। সিনেমাটির কাস্ট বদল হয়েছে। এখন অভিনয় করবেন পেদ্রো প্যাসকেল, ভেনেসা কির্বি, জোসেফ কুইন প্রমুখ। মার্ভেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে সিনেমাটি আরো ভালো করবে বলে মনে হচ্ছে। টোয়েন্টি এইট ইয়ার্স লেটার নিয়ে এরই মধ্যে দর্শকের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে।
জুটোপিয়ার মতো অ্যানিমেশন নিয়েও দর্শকের মধ্যে আগ্রহ থাকে বেশ। গত বছর অ্যানিমেশনের বাজারও ছিল ভালো। ‘উইকেড: ফর গুড’ আসবে নভেম্বরে। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ প্রচুর। গত বছর উইকেড ভালো ব্যবসা দিয়েছে। কনজুরিংয়ের মতো হরর সিনেমা নিয়ে বাজি ধরাই যায়। কেননা পুরনো এ ফ্র্যাঞ্চাইজি বহুকাল ধরে দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে। সবচেয়ে বড় আশাবাদ ও নিশ্চয়তা দিচ্ছে জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার। এটি বক্স অফিসে ২০০ কোটি ডলার হেসেখেলে আয় করবে বলে মনে করছে বক্স অফিস বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলো।
আবার কোনো কোনো সিনেমা নিয়ে আছে সন্দেহও। যেমন লায়ন্সগেটের ‘গুড ফরচুন’। কিয়ানু রিভস অভিনয় করছেন এ সিনেমায়। কিয়ানুকে নিয়ে আশাবাদ থাকলেও এ সিনেমার গল্পের কারণে সাফল্য নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের। ভিন্ন কারণে হলেও সন্দেহের তালিকায় আছে টম ক্রুজের ‘মিশন ইম্পসিবল’ও। সিনেমাটির মুক্তির তারিখ বদলে গেছে। মে মাসে মুক্তি পাবে মিশন ইম্পসিবলের শেষ সিনেমা ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’। আগের সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো না করায় সন্দেহ হচ্ছে এবারের সিনেমাটি নিয়েও।
জেমস গান ফিরছেন ‘সুপারম্যান’ নিয়ে। এর মধ্য দিয়ে কামব্যাক করার সম্ভাবনা থাকছে ওয়ার্নার ব্রোসেরও। কিন্তু সুপারম্যান কতটা ভালো করবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে সিনেমাপ্রেমীদের। কেননা ২০১৩ সালে জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত ‘ম্যান অব স্টিল’ নিয়ে দর্শক এখনো মোহিত। তবে গান ভালো পরিচালক। আশা করা যায়, সুপারম্যানকে তিনি উপস্থাপন করবেন দারুণভাবে।
এদিকে ক্যাপ্টেন আমেরিকা আসছে নতুন কাস্ট নিয়ে। যুক্ত হয়েছেন হ্যারিসন ফোর্ড। সিনেমার ট্রেলার সন্তোষজনক, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই পুরনো ক্যাপ্টেনকে খুঁজবে দর্শক। অ্যান্থনি ম্যাকিকে ক্যাপ্টেনের পোশাকে তারা কতটা পছন্দ করবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রেড হাল্কের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের দ্বৈরথটা অবশ্য ভালো হবে বলেই মনে হয়। তবু এ সিনেমার সাফল্য নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে দর্শক ও সিনেমাসংশ্লিষ্টদের।
তবে সাফল্যের বিষয় নিয়ে দোলাচালে থাকা সিনেমার সংখ্যাও কম নয়। ব্র্যাড পিট আসছেন স্পোর্টস সিনেমা নিয়ে। ‘এফ ওয়ান’ নামের সিনেমাটি আনছে অ্যাপল অরিজিনাল ফিল্মস ও ওয়ার্নার ব্রোস। পরিচালনা করছেন জোসেফ কোসিনিস্কি। এ ধারার সিনেমা এখন কতটা দর্শক টানবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। একই রকম সন্দেহ ‘স্নো হোয়াইট’ নিয়ে। ডিজনির এ সিনেমায় যদিও অভিনয় করছেন গাল গাদত (ইভিল কুইন চরিত্রে), তার পরও বাজেট ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ২৪ কোটি ডলারে নির্মিত সিনেমাটি কতটা ব্যবসা করতে পারবে, তা ভাবাচ্ছে নির্মাতাদের।
জ্যারেড লেটোর সিনেমা কোনো কারণে বক্স অফিসে সফল হচ্ছে না। এবার তিনি নিয়ে আসছেন ‘ট্রন: অ্যারিস’। আবারো সাইফাই। এ ধারার সিনেমায় লেটোকে দর্শক কতটা গ্রহণ করবে, তা সময় বলে দেবে।
এ সবকিছুর মধ্যে হয়তো পূর্বাভাস অনুসারে সব হবে না। তবে কিছু সিনেমা ভালো করবে আর কিছু সিনেমা হয়তো তালিকার বাইরে থেকে এসে বক্স অফিসে জায়গা করে নেবে।
ভ্যারাইটি ও ডেডলাইন অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান