হররকে গুরুত্ব দিচ্ছে হলিউড

একা ঘরে বসে আছেন। হুট করে মনে হলো আপনি একা না, ঘরে আছে আরো কেউ। গা শিরশির করে উঠল।

একা ঘরে বসে আছেন। হুট করে মনে হলো আপনি একা না, ঘরে আছে আরো কেউ। গা শিরশির করে উঠল। আপনার নিজের সঙ্গে না হলেও সিনেমায় এমন ঘটনা দেখে গা শিরশির করতে পারে। অথবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেলেন কোনো পোড়োবাড়িতে। সেখানে বহু বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল কেউ। তার আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় বাড়িময়। এটাও আপনার সঙ্গে না হতে পারে কিন্তু সিনেমায় দেখেছেন বা গল্পে পড়েছেন। ছোটবেলায় পড়েছেন হানাবাড়ির গল্প। বড় বেলায় ড্রাকুলা থেকে শুরু করে স্টেফানি মেয়ারের টোয়াইলাইট।

গত শতকের ত্রিশের দশক থেকেই হলিউডের অন্যতম বাণিজ্যসফল ঘরানা হরর। একের পর এক হরর নির্মাণ হয়েছে এবং তা বক্স অফিস থেকে তুলে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। তাছাড়া দর্শকের মনেও স্থায়ী আসন নিয়েছে। ১৯২২ সালের ‘নসফেরাতু: আ সিম্ফনি অব হরর’ এখনো আলোচনায় থাকে। হিচককের ‘দ্য বার্ডস’, ‘সাইকো’ ও ‘ফ্রেনজি’র মতো সিনেমা হয়ে উঠেছে কাল্ট ক্ল্যাসিক। কিন্তু দীর্ঘ সময় হলিউডভিত্তিক সমালোচক ও পুরস্কারের ক্ষেত্রে হরর ছিল অবহেলিত।

১৯২৯ সাল থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি হরর সিনেমা অস্কারে মনোনীত হয়েছে। এর মধ্যে দুটো এসেছে গত এক দশকে। তবে হররকে যে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না সে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে ২০১৮ সালে। ‘হেরেডিটারি’র জন্য টোনি কোলেতকে অস্কারে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবু তার পারফরম্যান্স ও সিনেমাটি নিয়ে কথা অন্তত হয়েছিল। কিন্তু এমন অনেক সিনেমা আছে, যা নিয়ে টুঁ শব্দটা অবধি হয়নি। যেন হরর নিয়ে কথা বললে বা হররকে পুরস্কার দিলে পুরস্কারের পাশাপাশি সিনেমারই জাত যাবে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’, ‘নসফেরাতু’ ও ‘টেরিফায়ার থ্রি’র মতো সিনেমা গুরুত্ব পাচ্ছে। সেখান থেকেই বলা যায় যে একাডেমি ও সিনেমাসংশ্লিষ্টরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন জনরাটি নিয়ে।

হররের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। হত্যা, রক্ত, কুৎসিত দর্শন চরিত্র, দৃশ্যায়ন তার মধ্যে অন্যতম। এসব কারণে হররকে তালিকায় রাখতে চায় না অনেকে। দ্য সাবস্ট্যান্স ও নসফেরাতু হররের একটি সাব-জনরায় পড়ে। একে নাম দেয়া হয়েছে ‘এলিভেটেড হরর’। এসব সিনেমা ক্ষেত্রে নৃশংসতা কম দেখিয়ে নেতিবাচক ভাবটা বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়। যদিও দুটো সিনেমায়ই শেষের দিকে ও কয়েক জায়গায় নৃশংসতা ছিল। অন্যদিকে টেরিফায়ার পুরোপুরিই নৃশংসতায় ভরা। এমনকি অনেকে মনে করেন এখন থেকে কয়েক দশক আগে হলে টেরিফায়ার কাটা পড়ত সেন্সরে। কিন্তু দ্য সাবস্ট্যান্স ও নসফেরাতু অস্কারে একাধিক মনোনয়ন পেয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠবে কেন হররে নতুন করে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে?

এক্ষেত্রে এলিভেটেড হরর একটা বড় কারণ। হররের পুরনো ধারার মারামারি, কাটাকাটি থেকে বের হয়ে মানসিকভাবে দর্শককে ভীতি দেয়া হচ্ছে এ ধারায়। তথাকথিত আর্ট সিনেমার ধারাটি অনুসরণ করে এলিভেটেড হরর। এর বাইরে একটা রাজনৈতিক মাত্রাও আছে সাব-জনরাটির। হরর সবসময়ই পিছিয়ে পড়া মানুষ ও সমস্যা জর্জরিতদের ভয়কে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। সবসময় সেটা বোঝা যায় না বা গভীর মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হয়। কিন্তু এখন এসে অতিমারী, যুদ্ধ ও সামাজিক সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয় হররে। ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সেখানে একজন নারীর নানা ট্রমা ও সামাজিক অবস্থানের জায়গা থেকে তার অনিরাপত্তা তুলে ধরেছিল।

এছাড়া হরর সবসময়ই দর্শককে টেনেছে। সে কারণে হলিউডও নির্ভর করতে শুরু করে ফর্মুলা সিনেমায়। হরর মানেই যেন রক্ত, নৃশংসতা, কুৎসিত চেহারার চরিত্র, জীব ইত্যাদি হাজির করা হতো। একটা সময় ভ্যাম্পায়ার হয়ে উঠেছিল হররের প্রধান অনুষঙ্গ। পাশাপাশি ছিল জম্বি। একই ধারার চরিত্র নিয়ে সিনেমা হয়েছে বছরের পর বছর। নতুনত্বের ছিল অভাব। এসব কারণেও হরর পিছিয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে হরর নিজেকে আবিষ্কার করতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হলিউডও হররকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

আরও