আজ দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’ শীর্ষক এ সেমিনার
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে রাজধানীতে চলছে অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে আজ দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্মাতাদের মিথস্ক্রিয়ামূলক দিনব্যাপী ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’ শীর্ষক সেমিনার। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের দ্বিতীয় তলায় সেমিনারটি শুরু হবে। অনুষ্ঠানটি চলবে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
এ সেমিনারে মূলত চলচ্চিত্রের বিশ্বায়ন এবং এর সর্বজনীন শক্তিমত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন অংশগ্রহণকারীরা। এ নিয়ে অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই নিজস্ব শৈল্পিকতা প্রকাশ করে চলচ্চিত্র মাধ্যমকে অনন্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন পশ্চিমা দেশগুলোর চলচ্চিত্রকাররা। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর চলচ্চিত্রের রয়েছে নিজস্ব শৈল্পিকতা, কিন্তু তা প্রাচ্য থেকে একেবারেই ভিন্ন। ধারণা করা হতো, ‘এ দুই অঞ্চলের শিল্প কখনো এক হবে না।’ কিন্তু বিগত কয়েক বছরে চলচ্চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে চলচ্চিত্র হারিয়েছে নিজ সীমানা, পেয়েছে বৈশ্বিক পরিচিতি। এই একাত্মতাকে কীভাবে আরো ঋদ্ধ করা যায়, সেই ভাবনা উসকে দিতেই এ আয়োজন। এতে অংশ নিবেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও রুবাইয়াত হোসেনের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতারা।
এদিন বেলা ৩টায় ওয়েস্ট মিটস ইস্টে অংশ নিয়ে কথা বলবেন মেহেরজান ও আন্ডারকনস্ট্রাকশনখ্যাত নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন। সেমিনারে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে এ নির্মাতা টকিজকে বলেন, ‘এ
সময়ে এসে ওয়েস্ট মিটস ইস্ট শিরোনামের মতো আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে। প্রতিনিয়ত চলচ্চিত্র যে আরো শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম হয়ে উঠছে এবং সব বাধা পেরিয়ে অবলীলায় সীমানা অতিক্রম করছে, সেসব বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন অপরসীম।’ রুবাইয়াত জানিয়েছেন, এ সেমিনারে তিনি তার নির্মিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র মেড ইন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলবেন। বৈশ্বিকভাবে ছবিটির গল্পের তাত্পর্যের যৌক্তিকতাও তুলে ধরবেন।
অন্যদিকে একই উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ‘ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’ নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন রুবাইয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের
মতো পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরো বেশি হওয়া উচিত। এ বছর নারীদের নিয়ে যে আয়োজনটি সাজানো হয়েছে, সে ধারাবাহিকতা যেন আগামীতে বজায় থাকে, সে প্রত্যাশা করি।’
এর আগে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে উৎসবের অংশ হিসেবে গত রোববার শুরু হয় ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স। এদিন সকালে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের দ্বিতীয় তলায় কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন আমেরিকান চলচ্চিত্র উৎসব কিউরেটর, লেখক ও ব্লগার সিডনি লেভিন। আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরীন, অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা ও নির্মাতা রোবেন হিউগেন, পোলিশ নির্মাতা জোয়ানা ক্রিস-ক্রাউজে এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের সমন্বয়ক মিনাক্ষী শেডে। কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অভিনেত্রী ও সংগঠক বন্যা মির্জা এবং চৈতালী সমাদ্দার।
কর্মশালায় দেশী-বিদেশী নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী নির্মাতাদের অভিজ্ঞতা, প্রতিবন্ধকতা এবং তা উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বক্তারা বলেন, ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অর্থ একটি বড় বিষয়। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ফান্ডিং সংস্থাগুলোর চাহিদা ও শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তাছাড়া পৃথিবীর খ্যাতিমান চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর গুণগত মান, কাঠামো ও মার্কেটিং পলিসিগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে।
এছাড়া চলচ্চিত্রে নারীর অবস্থান, নারী নির্মাতাদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের উত্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয় এ আয়োজনে। সাধনা গ্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স। দুদিনের এ কর্মশালার সমাপ্তি টানা হয় গতকাল বিকালে।