আলোকচিত্রের আদি ইতিহাস নিয়ে ‘আলোকচিত্রপুরাণ’

আলোকচিত্র মানে নিছক একটি ছবি নয়। এর আছে ব্যাকরণ। আছে ইতিহাস। সেইসব বিষয় নিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের লেখা এসেছে।

আলোকচিত্র মানে নিছক একটি ছবি নয়। এর আছে ব্যাকরণ। আছে ইতিহাস। সেইসব বিষয় নিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের লেখা এসেছে। বাংলাদেশে সাহাদাত পারভেজ এ নিয়ে কাজ করেন। তার সাম্প্রতিকতম কাজ ‘আলোকচিত্রপুরাণ’। বাংলার ফটোগ্রাফির আদি প্রবন্ধ নিয়ে এ বই সম্পাদনা করেছেন। গতকাল ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে হয়ে গেল বইটির প্রকাশনা উৎসব।

সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার বেশি ব্যাপ্তির বইটি প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। বাংলায় ফটোগ্রাফির আদি প্রবন্ধগুলোর এক অনবদ্য প্রকাশনা আলোকচিত্রপুরাণ। এ বইয়ে আছে অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, আদীশ্বর ঘটক, মন্মথনাথ চক্রবর্তী, আনন্দকিশোর ঘোষ প্রমুখের লেখা প্রবন্ধ। এর সঙ্গে সম্পাদক যোগ করেছেন কিছু আলোকচিত্র ও আখ্যাপত্র।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও শিক্ষাবিদ ড. শহীদুল আলম। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম এবং আলোকচিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটোর অধ্যক্ষ সাইফুল হক অমি।

সাহাদাত পারভেজ তার বইটি নিয়ে বলেন, ‘বইটি সৃজনের আনন্দ আমি একটু একটু করে পেয়েছি। দীর্ঘদিন এ বইয়ের সঙ্গে ছিলাম। ১৮৮৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রবাসী, ভারতী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিক ফটোগ্রাফি বিষয়ক প্রবন্ধগুলো সংকলন করেছি।’

আলোকচিত্রপুরাণের প্রবন্ধগুলো সংকলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুরনো পত্রিকা দেখার আমার অভ্যাস ছিল। সেখান থেকেই পেয়ে যাই সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, আদীশ্বর ঘটকের মতো মনীষীদের লেখাগুলো। এরপর আমার মনে হয়েছিল লেখাগুলো মানুষের সামনে আনা উচিত। সেই ইচ্ছা থেকেই বইটি সম্পাদনা করা।’

বইটির প্রকাশক জসিম উদ্দিন আলোকচিত্রপুরাণ প্রকাশের নেপথ্য গল্পটা বলেন। তিনি বলেন, ‘বইটির সূচিপত্র দেখে কথাপ্রকাশের সম্পাদনা পর্ষদ জানায় বইটি প্রকাশ করা যায়। এতে তার পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। আলোকচিত্র সম্পর্কে কেউ যদি জানতে চান, এ বই তাদের জন্য একটা ভালো সহায়ক গ্রন্থ।’

কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম বলেন, ‘ফটোগ্রাফিতে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই বললেই চলে। কিন্তু বইয়ের নামের পুরাণ শব্দটাই একটা আবেদন নিয়ে আসে। গল্প, ইতিহাস, সাহিত্যের কথা মনে আসে। এ বইয়েও ফটোগ্রাফির ইতিহাস, গল্প, চলমানতার কথা আছে। কবিতা, গল্প, চিত্রকলা, সংগীত ইত্যাদি নিয়ে এমন অনেক বই আছে। বইটি আমি একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়েছি। সেখান থেকে বলা যায়, যেভাবে তিনি বইটি সাজিয়েছেন তা সাধারণ পাঠকের জন্য সহজ হয়েই উঠেছে।’

বিশিষ্ট আলোকচিত্রী সাইফুল হক অমি বলেন, ‘এ বইয়ের প্রথম গুরুত্ব মূলত আদি প্রবন্ধগুলো সংকলন করা। ফটোগ্রাফির বেসিক লেখা আর বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো এ বইয়ে আছে।’

সর্বশেষ আলোচক শহীদুল আলম বলেন, ‘একজন আলোকচিত্রী এত বছর ধরে গবেষণা করছেন, সেটা একটা বড় ব্যাপার। গবেষণার কাজই হচ্ছে প্রকাশিত কোনো বিষয়কে পুনরায় বিশ্লেষণ করা। সাহাদাত সে কাজটাই করেছেন।’ এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরো কাজ হবে, গবেষণা হবে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

আরও