চলচ্চিত্রের বন্ধু বঙ্গবন্ধু

আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের এদিন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তখন আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথের যাত্রা’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু তার অসীম সাহসিকতা দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, এ আশায় সাধারণ মানুষ বুক বেঁধেছিল। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু আগের মতোই এ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে তাদের সে স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে বেশকিছু মাইলফলক উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা আজ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের পথচলায় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হলো টকিজের আজকের বিশেষ আয়োজন ‘চলচ্চিত্রের বন্ধু বঙ্গবন্ধু’

আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের এদিন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তখন আখ্যায়িত করা হয়েছিলঅন্ধকার হতে আলোর পথের যাত্রা হিসেবে। বঙ্গবন্ধু তার অসীম সাহসিকতা দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, এ আশায় সাধারণ মানুষ বুক বেঁধেছিল। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু আগের মতোই এ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে তাদের সে স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে বেশকিছু মাইলফলক উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা আজ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের পথচলায় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হলো টকিজের আজকের বিশেষ আয়োজনচলচ্চিত্রের বন্ধু বঙ্গবন্ধু

 

বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির গোড়াপত্তন বঙ্গবন্ধুর হাতেই

দেশভাগ এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর এ অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারকে হটিয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার আসে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায়; শেখ মুজিবুর রহমান হন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী। এ সময় ঢাকায় একটি স্থায়ী ফিল্ম স্টুডিও স্থাপনের ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা করেন আবদুল জব্বার খান, ডক্টর আবদুস সাদেক, নূরুজ্জামান প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে একটি পরিকল্পনা পেশ করতে বললে তারা তা করেন। ১৯৫৬ সালে সরকার প্রদেশে চলচ্চিত্র শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়। পরের বছর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে এখানে একটি সংস্থা গঠনকল্পে ১ কোটি টাকা বরাদ্দের উদ্যোগ নেয়। এ অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দের দাবি তোলেন প্রাদেশিক চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান নাজীর আহমদ। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা তখন পূর্ব পাকিস্তানে একটি চলচ্চিত্র সংস্থা গঠনের পরামর্শ দেন। এ বিষয়টিই নাজীর তখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নজরে আনেন। তিনি সব শুনে সত্বর চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিলের একটি খসড়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির নির্দেশ দেন। তখন প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশন শেষ হতে মাত্র দুদিন বাকি। এ অবস্থায় শিল্প দপ্তরের উপসচিব আবুল খায়ের ও নাজীর আহমদ তাড়াতাড়ি করে এফডিসি বিলের কাগজপত্র তৈরি করেন। এরপর ওই বছরের ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশনের শেষ দিন বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র

উন্নয়ন সংস্থা বিল উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপনের পর পরিষদের সদস্যরা কিছু সংশোধনী আনেন। পরে সংশোধিত বিলটি বিনা বাধায় আইন পরিষদে পাস হয়। যাত্রা করে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, যা আজকের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বা এফডিসি নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার পরই এফডিসিতে চারটি ছবির কাজ শুরু হয়, সেগুলো যথাক্রমে আসিয়া (ফতেহ লোহানী), আকাশ আর মাটি (ফতেহ লোহানী), মাটির পাহাড় (মহীউদ্দিন) ও জাগো হুয়া সাভেরা (এজে কারদার) প্রতিষ্ঠার পর প্রথম যে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির প্রিন্ট করা হয়, সেটি ছিল ভারতীয় ইনসানিয়াত। পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার প্রথম নির্বাহী পরিচালক নাজীর আহমদ ১৯৮৫ সালের ১৬ জানুয়ারি সচিত্র বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ‘তার (বঙ্গবন্ধু) সাহ না থাকলে বোধহয় এ দেশে এফডিসির জন্ম হতো না। আর জন্ম হলেও হতো অনেক দেরিতে।

গতিশীল ইন্ডাস্ট্রির নেপথ্যের প্রাণপুরুষ

চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর পরই বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে অনেকগুলো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেন। এসব সিদ্ধান্তের ফলে দ্রুত চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ সম্ভব হয়। নির্মিত হতে থাকে একের পর এক চলচ্চিত্র। নতুন প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী, কুশলীরা এগিয়ে আসেন নতুন পেশায়। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানি প্রযোজক পরিচালকরাও এখানে ছবি নির্মাণ করতে আসেন। শুরু হয় জীবনবাদী ও সৃজনশীল ছবির কাজ। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিত্বের সময় শুরু হওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আসিয়া পরে শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পদক (১৯৬০) পায়। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত জাগো হুয়া সাভেরা মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উবে প্রতিযোগিতা করে স্বর্ণপদক পায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রের প্রতি এতটাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন যে, তিনি তখন ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এ ব্যাপারে ফতেহ লোহানীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে কামাল লোহানী সূত্রে জানা যায়। তবে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির কারণে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন যুগ

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র নানা আলোকে উদ্ভাসিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চলচ্চিত্র নতুন করে ভিত্তি ও এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণা পায়। এ সময় বাড়তে থাকে চলচ্চিত্রের সংখ্যা। নির্মিত হতে থাকে নব্যধারা ও মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র, সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার চলচ্চিত্র। অন্যদিকে পুনর্গঠিত হয় এফডিসি, সেন্সর বোর্ড, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, সংযোজিত হয় সেন্সর নীতিমালা। একই সঙ্গে প্রচেষ্টা চলে ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার। এ সময় আন্তর্জাতিক নানা উবে পাঠানো হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। দেশে অনুষ্ঠিত হয় বিদেশী চিত্র মেলা এবং চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের সূচনা


বঙ্গবন্ধুর আমলে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নবতম সংযোজন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই এ প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং ১৯৭২ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাহিনীচিত্র নির্মাণ। এসবের মধ্যে রয়েছে ওরা ১১ জন, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ধীরে বহে মেঘনা, আবার তোরা মানুষ হ, আলোর মিছিল ও সংগ্রাম। উল্লেখ্য, সংগ্রাম ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজে। বঙ্গবন্ধুর আমলেই নির্মিত হয় কালজয়ী উপন্যাসভিত্তিক চলচ্চিত্র তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)। এছাড়া ইতিহাসভিত্তিক চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ঈশা খাঁ (১৯৭৪), লালন ফকির (১৯৭২)।

নবীন নির্মাতাদের পথপ্রদর্শক

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণার ছাপ রয়েছে তার সময়ে নির্মিত তরুণ চলচ্চিত্রকারদের চলচ্চিত্রে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এহতেশামের এদেশ তোমার আমার, মহীউদ্দিনের মাটির পাহার, ফতেহ লোহানীর আকাশ আর মাটি। সালাউদ্দিনের যে নদী মরুপথে, সূর্যস্নান, ধারাপাত, জহির রায়হানের কখনো আসেনি, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা। সুভাষ দত্তের সুতরাং তো প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে অনুষ্ঠিত এশিয়া চলচ্চিত্র উবে পুরস্কার পায়। জহির রায়হান রঙিন ছবি সংগম বানিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। অন্যদিকে উর্দু ভাষার বাজারি চলচ্চিত্রের প্রচণ্ড আধিপত্যের মধ্যেও সালাউদ্দিন লোকগাথাভিত্তিক রূপবান (১৯৬৫) বানিয়ে বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রে অন্য মাত্রা যোগ করেন।

চলচ্চিত্র খাতে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার

প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) চলচ্চিত্র খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। বরাদ্দকৃত এ অর্থে ফিল্ম স্টুডিওর সম্প্রসারণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে নতুন ফিল্ম স্টুডিও প্রতিষ্ঠা, ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও সারা দেশে ১০০টি নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হবে ছয় হাজার লোকের কর্মসংস্থানের।

চলচ্চিত্র সংসদ


স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতি বিকাশ ও চর্চার ক্ষেত্রে গতি পায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ১৪-১৫টি চলচ্চিত্র সংসদ গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ ফেডারেশন।

বাংলাদেশে বিদেশী চলচ্চিত্রের উ

আন্তর্জাতিকভাবে এ দেশের নির্মাতা-কলাকুশলীদের পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বাইরের চলচ্চিত্রকে এ দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকালে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে ঢাকায় পোল্যান্ড চলচ্চিত্র উ, ১৯৭৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র উব অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আমলে বিদেশে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রতিনিধিত্ব করে। একই সঙ্গে পুরস্কারও পায়। ১৯৭২ সালের তাসখন্দ চলচ্চিত্র উবে জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড পুরস্কার পায়। এটি পরে সিডালক পুরস্কারও অর্জন করে। ১৯৭৩ সালে সুভাষ দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী মস্কো১৯৭৪ সালে খান আতাউর রহমানের আবার তোরা মানুষ হ ও মিতার আলোর মিছিল তাসখন্দ চলচ্চিত্র উবে প্রদর্শিত হয়।

 

বিদেশী চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত

 

দেশী চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর আমলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে উর্দু ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়। একই বছর ভারত থেকে শুধু বাংলা চলচ্চিত্র আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় চলচ্চিত্র কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। একই সময়ে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে আমদানীকৃত উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র এ দেশীয় আমদানিকারক ও পরিবেশকরা বাংলাদেশের সম্পত্তি হিসেবে প্রদর্শনের অনুমতি চাইলে বঙ্গবন্ধু তাদের সে দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।

চলচ্চিত্র রফতানি

বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে রফতানি শুরু হয়। বিভিন্ন ছবি রফতানি বাবদ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ২ হাজার, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে ১১ হাজার ও ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ডলার আয় করতে সক্ষম হয়।

নতুন সেন্সর আইন ও বিধি প্রবর্তন

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে প্রবর্তিত সেন্সর আইন ও বিধি সংশোধন করা হয় বঙ্গবন্ধুর সময়কালে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সিনেমাটোগ্রাফ রুলস, ১৯৭২; দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩।

চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু

১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ সময়কাল বিধৃত হয়েছে দেশী-বিদেশী মুভি ক্যামেরায়। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, প্রতিবাদ, জনসভা, সংবর্ধনা, অসহযোগ আন্দোলন, সাক্ষাত্কার, ৭ মার্চের ভাষণ চলচ্চিত্রের উপাদান হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রদর্শন হয়। পরবর্তী সময়ে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রে এসব ব্যবহূত হয়েছে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশে আগমন, দিল্লি থেকে শুরু করে জাপান, রাশিয়া, মিসর, ইরাকে বঙ্গবন্ধুর সফর নিয়ে একাধিক প্রামাণ্যচিত্র। রয়েছে অসমাপ্ত মহাকাব্য, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা কী করে আমাদের হলো (৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ অবলম্বনে), বঙ্গবন্ধু ফরএভার ইন আওয়ার হার্টস, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম (বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতিবিষয়ক তথ্যচিত্র), আমাদের বঙ্গবন্ধু (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র), সোনালী দিনগুলো (বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর), ওদের ক্ষমা নেই ও হূদয়ে বঙ্গবন্ধু। এছাড়া উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে রহমান, দ্য ফাদার অব বেঙ্গল, বাংলাদেশ, ডেভিড ফ্রস্ট প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ, দ্য স্পিচ, পলাশি থেকে ধানমন্ডি, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু ছবি উপভোগ করতেন

রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা ও নেতৃত্বের পেছনে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি চলচ্চিত্র উপভোগ করতেন। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির অন্যতম সংগঠক মিয়া আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু রূপবান ছবিটি দেখেছেন। এছাড়া চিত্রগ্রাহক মাসুদ উর রহমান বলেছেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিও দেখেছেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতারা

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শুধু এ দেশের নির্মাতাদের সম্পর্ক ছিল না। অন্যান্য দেশের নির্মাতাদের সঙ্গেও তার দারুণ সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে রয়েছেন কিংবদন্তি ভারতীয় নির্মাতা সত্যজি রায় ও জাপানের নির্মাতা নাগিসা ওসিমা।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শ্যাম বেনেগালের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি (নির্মীয়মাণ)

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে লক্ষ্য রেখে প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে তার জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালকে। বিশাল বাজেট ও বড় আয়োজনে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি।

 

তথ্য সহায়ক গ্রন্থ: অনুপম হায়া রচিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

আরও