বিশ্ব সিনেমায় ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ

ফিলিস্তিনের ওপর চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। সম্প্রতি গাজায় বোমাবর্ষণে শহরটি প্রায় ধুলোয় মিশে গেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের এ ঘটনা বহু পুরনো।

ফিলিস্তিনের ওপর চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। সম্প্রতি গাজায় বোমাবর্ষণে শহরটি প্রায় ধুলোয় মিশে গেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের এ ঘটনা বহু পুরনো। ধর্ম, রাজনীতি, ক্ষমতা সব এসে মিশেছে এ সংকটে। ফিলিস্তিন বহু বছর ধরে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত। গণহত্যা চলছে দেশটিতে। নানা সময়ে ফিকশনে এসেছে সে কথা। উপন্যাস লেখা হয়েছে, কবিতা লেখা হয়েছে, সিনেমায়ও এসেছে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ। এর মধ্যে কোনো সিনেমা নির্মাণই হয়েছে ফিলিস্তিনকে নিয়ে। কোনোটিতে এসেছে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ। এমন কয়েকটি সিনেমা সম্পর্কে জানা যাক, যেখানে ফিলিস্তিন ও তার বাস্তবতাই প্রধান।

প্যারাডাইস নাউ

হানি আবু আসাদ পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ড্রামা, যা আবর্তিত হয়েছে দুই ফিলিস্তিনি নাগরিক সাইদ ও খালেদকে ঘিরে। তারা ইসরায়েলে একটি আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করে। তারা ধার্মিক না, তারা রাজনৈতিক কর্মীও না। তারা দুই বন্ধু নিজেদের শেষ দিনগুলো একসঙ্গে যাপন করছিল। এর মধ্য দিয়েই বা তাদের গল্পের মধ্য দিয়েই সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফিলিস্তিনের অবস্থা।

গোল্ডেন গ্লোবে সেরা বিদেশী সিনেমা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিল। এছাড়া প্রথম ফিলিস্তিনি সিনেমা হিসেবে এটি মনোনীত হয়েছিল একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে। একই সময়ে সিনেমাসংশ্লিষ্ট বেশকিছু গ্রুপ প্যারাডাইস নাউকে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড থেকে বাদ দেয়ার জন্যও আন্দোলন করেছিল।

ওয়াল্টয ইউথ বশির

এরি ফোলম্যান ২০০৮ সালে নির্মাণ করেন সিনেমাটি। লাইভ অ্যাকশন না, সিনেমাটি অ্যানিমেটেড। মূলত ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের এক সৈন্যকে নিয়ে এগোয় গল্পটি। সিনেমার অ্যানিমেশন করেছিলেন ডেভিড পোলনস্কি। তার অ্যানিমেশন ও ফোলম্যানের নির্মাণ এর বিষয়কে আরো স্পষ্ট করে তুলেছিল দর্শকের কাছে। ফলে ওয়াল্টয উইথ বশির গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অ্যানিমেটেড সিনেমার পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি অস্কারেও মনোনীত হয়েছিল।

লেমন ট্রি

সিনেমাটিও ২০০৮ সালে নির্মিত। নির্মাণ করেছেন এরান রিকলিস। সিনেমাটিতে সালমার গল্প বলা হয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনের একটি গ্রামের বাসিন্দা। লেবু বাগানের ওপর নির্ভর করেই জীবনধারণ করেন। কিন্তু একটা সময় ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু উদ্যোগ নেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নামে কিছু সীমানা তৈরির চেষ্টা করে, যার কারণে ধ্বংসের মুখে পড়ে সালমার লেবু বাগান। সালমা তা মানতে চায় না। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায় সে।

লেমন ট্রি মূলত একটি মানবিক গল্প। একটি ছোট পরিসরের গল্প থেকে বড় পরিসরের বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা দেখা যায় এ সিনেমায়।

ফাইভ ব্রোকের ক্যামেরাস

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। এর মধ্যে একটা সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুরু করে হত্যার মহোৎসব। কিন্তু নানা সময় তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন হয়েছে। সে গল্প নিয়েই তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন গাই দাভিদি ও এমাদ বার্নাট। পশ্চিম তীরের বহু ঘর, পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও নিপীড়নের চিত্র এ দুই নির্মাতা তুলে রেখেছিলেন তাদের ক্যামেরায়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তারা কাজটি করেছেন।

তথ্যচিত্রকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক ও সিনেম্যাটিক অ্যাক্টিভিজমের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নির্মাতারা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যেকোনো সময় তাদের ঘরের দরজায় ধাক্কা পড়তে পারে এবং সব শেষ হয়ে যেতে পারে জেনেও তারা কাজ করে গেছেন।

দ্য গেটকিপারস

২০১২ সালের সিনেমাটিকে ইসরায়েলি সিনেমা বলা হলেও বস্তুত এর পেছনে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রযোজনা সংস্থার হাত আছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ইসরায়েলি নির্মাতা দোরর মোরে। কম্পিউটার অ্যানিমেশন ও বেশকিছু দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া আছে আর্কাইভের বেশকিছু ফুটেজ। ইসরায়েলি সরকার ছাড়াও যে তাদের এজেন্সি শিন বেট বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এ সিনেমা সেদিকে নজর দেয়। সিনেমায় যুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু চিত্র আছে। নির্মাতা দ্য ফগ অব ওয়ার থেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করেন।

ফক্সট্রট

এক ধারার নাচের নাম হলেও স্যামুয়েল মাওজের ফক্সট্রট একটি ফ্যামিলি ট্র্যাজেডি। নির্মাতা এ সিনেমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে। সিনেমাটি পেয়েছিল সিলভার লায়ন। এ সিনেমায় তিন ধাপ বা ভাগে গল্পটি বলা হয়েছে। শুরুর গল্পে সেনারা এক মধ্যবয়সী দম্পতির বাড়িতে এসে জানায় তাদের ছেলে ডিউটিরত অবস্থায় মারা গেছে। এরপর সীমান্তে দায়িত্বরত সেনাদের জীবনের গল্প দেখানো হয়। সেখান থেকে গল্প আবার চলে যায় ওই দম্পতির কাছে। সিনেমাটিতে মূলত সৈন্যদের অবস্থা দেখানো হয়েছে। সেনারা সরল মনে সীমান্ত ও যুদ্ধে গিয়ে রাজনীতির বলি কীভাবে হন সে কথা বলে সিনেমাটি। সিনেমা বিশ্লেষকরা বলতে চার মাওজের কাজটি মানবিকতার দিক তুলে ধরতে চেয়েছে।

গাজা মন আমোর

জার্মান সিনেমাটির পরিচালক আরব নাসর ও তার্জান নাসর। সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হয়েছিল জার্মান, পর্তুগিজ ও আরবি ভাষায়। এটি মূলত ৬০ বছর বয়সী জেলের গল্প, যে কখনো তার পছন্দের নারীকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি। কিন্তু একসময় জালে ওঠা গ্রিক দেবতা অ্যাপলোর মূর্তি দেখে তার মনে হয় ভাগ্যদেবতা এবার প্রসন্ন হলেন। কিন্তু দেবতা প্রসন্ন হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ মূর্তির খোঁজ পেলে শুরু হয় নতুন সমস্যা। সিনেমার এ গল্পের মধ্য দিয়ে গাজার চলমান অস্থিরতা, সামাজিক সংকট ইত্যাদি তুলে ধরেছেন নির্মাতারা।

নো আদার ল্যান্ড

চারজন নির্মাতার দলগত প্রয়াস এ সিনেমা। এটিও দুই বন্ধুর গল্প। পশ্চিম তীরের এক গ্রামের দুই বন্ধুর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের চলমান অবস্থার বাস্তবতা দেখিয়েছেন নির্মাতারা। অনেকটা দিনলিপির মতো এগিয়েছে গল্প। বাসেল ও ইউভালের এ গল্প একসময় হয়ে ওঠে বাস্তু রক্ষার সত্যের দিনলিপি।

আরও