নাট্যদল এম্পটি স্পেস-এর প্রথম প্রযোজনা ‘আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ মঞ্চে উঠছে আগামীকাল
থিয়েটার নাট্যদলের তরুণ দুই কর্মী গোলাম শাহারিয়ার সিক্ত ও নূর জামান রাজা। একটা সময় এ দুই যুবক অনুধাবন করেন নিজেদের মতো করে একটি নাট্য সংগঠন গড়ার। ২০০৯ সালে তারা শুরু করেন নিজেদের স্বপ্নপূরণের পথচলা। কিন্তু বাস্তবে তো আর স্বপ্ন এত সহজে ধরা যায় না, যথারীতি শুরু হয় সংগ্রাম, সংকট! তার পরও ঢের প্রচেষ্টা চালিয়ে যান সিক্ত ও রাজা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একটি নতুন দল গড়ার স্বপ্ন পূরণ হতে তাদের লেগে যায় দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর। ২০১৮ সালের ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে তাদের নিজেদের নাট্যদল
‘এম্পটি স্পেস’।
এ পর্যায়ে ‘এম্পটি স্পেস’ মুখোমুখি হয় নতুন ও প্রথম চ্যালেঞ্জের। তা হলো দর্শকদের প্রথম উপহার কী দেবে তারা? ‘শুরু
থেকেই লক্ষ্য ছিল আমাদের দেশীয় ঢঙে গল্প হাজির করা। একই সঙ্গে আমরা এমন এক গল্প হাজির করতে চেয়েছি, যা প্রথাকে প্রশ্ন করবে এবং নতুন চিন্তার উদ্রেক ঘটাবে। সব মিলিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাইমন জাকারিয়া রচিত ‘আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নামের মৌলিক গল্পটি মিলে যায়। মূলত এর পরই শুরু হয় নতুন দলের প্রথম প্রযোজনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কাজ’—বলেন দলের সভাপতি সিক্ত।
আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকটি গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো মঞ্চস্থ হয় এবং দর্শক-সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরো একটি মঞ্চায়নের পর এবার এ নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা ভবনের মূল মিলনায়তনে নাটকটি প্রদর্শিত হবে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নূর জামান রাজা।
শুরুতেই দলের সদস্যরা নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়নকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এমনটা কেন জানতে চাইলে তাদের ভাষ্য, তৃতীয় কথাটির মর্মার্থ অনেক। নিজেদের সক্ষমতার পরিপূর্ণতা যাচাইয়ের একটি মান নির্ণয়ক বলা যেতে পারে সংখ্যাটিকে। তাছাড়া নাটকটির পুনঃমঞ্চায়নের আরো একটি গুরুত্বের দিক হলো, ‘বাংলাদেশে
এখন ৩০০টিরও বেশি দল আছে। ৩০ দিন ধরে এ দলগুলোর কোনোনা কোনো নাটক মঞ্চায়িত হয় শিল্পকলায়। কিছু দল আছে, যাদের প্রতি মাসে দু-তিনবার করে হল বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া আমরা নতুন দল বিধায় গত সেপ্টেম্বর থেকে এ মাস পর্যন্ত কোনো হল বরাদ্দ পাইনি। তবে ৮ তারিখ আরণ্যক নাট্যদল তাদের পূর্বনির্ধারিত শোটি স্থগিত করায় আমরা এ নাটকটিকে মঞ্চায়নের সুযোগ পেয়ে যাই। এ কারণেও বেশি ভালো লাগছে আমাদের।’
নাটকটি সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল, তাদের বক্তব্য, নতুন দল এম্পটি স্পেসের প্রথম এ প্রযোজনা আরো একটি ক্ষেত্রে বেশ সাহসী ভূমিকা রেখেছে। উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ‘দ্য ট্র্যাজেডি অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর অ্যাখ্যানকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তারা। নাটকটির গল্প এমন প্রাচ্যের একজন কবির অন্যতম একটি দার্শনিক অবস্থান হলো প্রেমের সঙ্গে অস্থিরতার সম্পর্ক নেই। সত্যিকারের প্রেম ধীর-স্থির গতিতে এগিয়ে চলে। একদিন এ কবি একটি সমাধিস্থলে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান রোমিও, জুলিয়েট, শেকসপিয়ার ও ফাদার ফ্রায়ারের ভাস্কর্য। একপর্যায়ে বিভ্রমের মধ্যে পড়ে যান এবং মুখোমুখি হন তাদের। তিনি রোমিওকে প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নবাণ থেকে বাদ পড়েন না স্বয়ং শেকসপিয়ারও। কথোপকথনের একপর্যায়ে শেকসপিয়ার কবির প্রশংসা করেন তার লেখা কাহিনীকে এতদিন পর এভাবে সামনে আনার জন্য।
এ নাটকে শেকসপিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বাধীন বিশ্বাস। নাটকটিতে আরো অভিনয় করেছেন গোলাম শাহারিয়ার সিক্ত, নূর জামান রাজা, লোবা আহম্মেদ ফকির বিপ্লব, সরদার বাপ্পি ও শুভ্র আহম্মেদ।
সবশেষে এম্পটি স্পেসের সদস্যরা জানিয়ে রাখলেন, দলের দ্বিতীয় প্রযোজনা নিয়ে তারা এরই মধ্যে অনেক কিছু গুছিয়ে এনেছেন। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত ঘোষণায় জানিয়ে দেয়া হবে ।