ফিরে আসবে কি ডিভিডি ভিডিও ক্যাসেটের যুগ?

গলির মোড়ের দোকান। শেলফে সাজানো বড় বড় ক্যাসেট। অডিও ক্যাসেট নয়, এগুলো ভিডিও ক্যাসেট।

গলির মোড়ের দোকান। শেলফে সাজানো বড় বড় ক্যাসেট। অডিও ক্যাসেট নয়, এগুলো ভিডিও ক্যাসেট। সময়টা এ শতকের প্রথম দশক বা তারও আগে। এরপর সে শেলফগুলো ভরে যায় গোল গোল চাকতিতে। চাকতিগুলো থাকত প্লাস্টিকের বাক্সে। নাম সিডি, ডিভিডি। সিডি অর্থাৎ কমপ্যাক্ট ডিস্ক আর ডিভিডি হলো ডিজিটাল ভার্সেটাইল ডিস্ক। সহজ যে বৈশিষ্ট্য বা পার্থক্য দেখা যায়, তা হলো সিডির ধারণক্ষমতা ছিল কম আর ডিভিডির বেশি। ১৯৯৬ সালে প্রথম মুক্তি পায় ডিভিডি। এরপর প্রায় ১০-১২ বছর জনপ্রিয় ছিল। এখন আবার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ মাধ্যমগুলোর। পরিসর ছোট হলেও ব্রুকলিনের একটি দোকান সে সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে আমাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম। সিনেমা, সিরিজ সবই এখন ওটিটি নির্ভর। অথচ একটা সময় ছিল যখন সিনেমা হাতে স্পর্শ করা যেত। ওই সময়ের যারা সিনেমার পোকা তারা ডিভিডি সংরক্ষণ করতেন। করেন এখনো। বহু দোকান হয়ে উঠেছিল সিনেমার লাইব্রেরি। ব্রুকলিনের নাইট আউল ভিডিও আবারো নিয়ে এসেছে সিনেমা ধারণের এ বস্তগত মাধ্যমগুলো। নিউইয়র্কের উইলিয়ামসবার্গের এ সিনেমা লাইব্রেরির স্লোগান হলো—‘ডেথ টু স্ট্রিমারস! ফিজিক্যাল মিডিয়া ফরএভার!’

নাইট আউল স্টোর প্রতিষ্ঠা করেছেন অ্যারন হ্যামেল ও তার বন্ধু জেস মিলস। অ্যারন বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে চিন্তা করে দেখেছি যে এখন আর এ রকম ফিজিক্যাল স্টোর থাকছে না বা নতুন করে হচ্ছে না। যা ছিল তা-ও বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নিজে একটা সময় এ ধরনের স্টোরগুলোয় যেতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি স্মৃতিকাতরতায় ভুগি। এখনো মনে হয়, একটা জায়গায় গিয়ে সরাসরি সিনেমায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টা সুন্দর।’

ভিডিও ক্যাসেট নেই অনেক দিন ধরে। ডিভিডি, ব্লু-রে ডিস্ক নিয়ে মানুষের আগ্রহ ততটা নেই। কেউ কেউ সংরক্ষণ ও নস্টালজিয়া থেকে এর সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে কিমস রেন্টাল ইনভেন্টরি ২০২২ সালে নতুন করে চালু হয়। নিউইয়র্কে বার্নস অ্যান্ড নোবলসের বেশকিছু আউটলেটেও ব্লু-রে ডিস্ক বিক্রি হয়। তবে কেবল ভিডিও ডিস্ক বা সিনেমার এ রকম স্টোর নিউইয়র্কে নাইট আউল ভিডিও ছাড়া নেই বলেই জানান হ্যামলে ও মিল।

ওটিটি, অনলাইন প্লাটফর্ম ও স্টোরগুলো দর্শক ও ক্রেতাদের জন্য সহজ। কিন্তু সেখানে ক্রেতাদের মধ্যে কথা হওয়ার সুযোগ নেই। ফিজিক্যাল স্টোরগুলো এ সুযোগ দেয়। মিলস বলেন, ‘আমি একটা দৃশ্য খুব পছন্দ করি। একজন একটা সিনেমা হাতে নিলেন, পাশ থেকে আরেকজন ক্রেতা তাকে বলছেন, ‘‘এই সিনেমাটা ভালো।’’ আসলে এ আলাপগুলো একজন দর্শককে আরেকটা সিনেমার খোঁজ দেয়। স্ট্রিমিং প্লাটফর্মেও পাওয়া যায়, তবে তারা অ্যালগরিদম নির্দিষ্ট করে রাখে। সে অনুসারেই আপনাকে ভাবতে তারা বাধ্য করে। কিন্তু একটা ঘরে যদি ২০ জন সিনেমাপ্রেমী থাকেন তাহলে সিনেমার জানাশোনাও ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য।’

শব্দ রেকর্ড করা শুরু হয় সম্ভবত ভিনিল থেকে। সেই গোল চাকতিই এক সময় পরিবর্তিত হয়ে এল ডিভিডিতে। যেখানে শব্দ ধারণ করা হতো বিজ্ঞান সেটাকে রূপান্তর করে চিত্র ও চলচ্চিত্র রাখার ব্যবস্থা করল। ভিনিল বন্ধ হয়ে গেছে আরো আগে। কিন্তু হ্যামেলের মনে হয়, সেটা বোধ হয় ১৫-২০ বছর আগের কথা। ডিভিডি সে তুলনায় অনেক নতুন। এখনো বহু মানুষের কাছে ডিভিডি, ব্লু-রে ডিস্ক সংরক্ষণ করা আছে।

স্ট্রিমিংয়ের এ সময়ের একটা বড় সুবিধা অল্প খরচে বেশি সিনেমা বা কনটেন্ট পাওয় যায়। ডিস্কের মূল্য সে তুলনায় অনেক বেশি। নাইট আউলে একটা ব্লু-রে ডিস্কের দাম ২০-৪০ ডলার। তবু এ স্টোরের ওপেনিংয়ে প্রায় ৫৫০ জন ক্রেতা-দর্শক এসেছিলেন। হ্যামেল ও মিলস এত দর্শক আশা করেননি। তাদের নতুন করে স্টক আনতে হয়েছিল ডিস্কের। কারণ প্রথমেই সবাই কিছু না কিছু কিনে নিয়েছিলেন।

২০-২২ বছরের তরুণ-তরুণীদের অনেকে ডিস্ক কখনো ব্যবহারই করেননি। নাইট আউলে এমন অনেক তরুণ এসেছিলেন এবং তারা ডিস্ক কিনে নিয়ে গেছেন। তেমনই একজন সারাহি। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোনো কিছু নেই। বলা যায়, এবারই শুরু করছি। এখন অনেক স্ট্রিমার আছে। সেখানে সবক’টিতেই টাকা খরচ করতে আমি রাজি নই। তার চেয়ে কোনো কিছু নিজের অধিকারে রাখতে পারার বিষয়টা ভালো। এ ডিস্ক তো এখন আমার সম্পত্তি হয়ে গেল। স্ট্রিমিংয়ে এ সুবিধা পাব না।’

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

আরও