বিশ্বজুড়ে অ্যানিমের বহু ভক্ত ছড়িয়ে আছে। জাপানের অ্যানিমেশন নিয়ে তাদের আগ্রহের অন্ত নেই। মূলত হায়াও মিয়াজাকি ও স্টুডিও ঘিবলির হাত ধরে অ্যানিমের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী হয়। এর আগে ও পরে আরো অ্যানিমে দর্শকের মন জয় করেছে। অ্যানিমের মধ্যে যেমন আছে সিনেমা, তেমনি আছে সিরিজ। কিছু সিরিজ বছরের পর বছর ধরে চলছে। হাজার এপিসোড পার করা অ্যানিমেও কম নেই। এর মধ্যে আইএমডিবিতে সেরা রেটিং পাওয়া অ্যানিমেও রয়েছে। আজ জানব আইএমডিবি রেটিংয়ে সেরা ৭ অ্যানিমে সম্পর্কে।
স্পিরিটেড অ্যাওয়ে
চিহিরো নামের এক বালিকার গল্প এটি। ২০০১ সালে মুক্তি পেয়েছিল অ্যানিমেটি। বিশ্বে এ অ্যানিমে দারুণ জনপ্রিয়। গল্পে দেখা যায় চিহিরো তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি জায়গায় যায়। সেখানে গিয়ে তার বাবা-মা পরিণত হয় অদ্ভুত প্রাণীতে। চিহিরো তাদের স্বরূপে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। মুক্তির পর থেকেই স্পিরিটেড অ্যাওয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে দর্শকের কাছে। এটিকে বহুজন নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কারো কারো মতে, গল্পটি নিয়ে অনিঃশেষ লোভের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ কেমন করে ফিরে আসতে পারে, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে সে গল্প বলে। মিয়াজাকির অ্যানিমেটি আইএমডিবিতে ৮ দশমিক ৯ রেটিং পেয়েছে।
গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ
এ অ্যানিমে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় বয়ানটি হলো—এটি কেউ দ্বিতীয়বার দেখতে চায় না। বিষয়টি এমন না যে অ্যানিমেটি খারাপ। খারাপ হলে তো আইএমডিবিতে ৮ দশমিক ৬ রেটিং আসত না। এটি যুদ্ধের গল্প। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে ঘটে যাওয়া বোমা হামলা নিয়েই গল্প। তবে এর কেন্দ্রে আছে দুই অনাথ ভাইবোন। ১৪ বছর বয়সী সিইতা ও তার চার বছর বয়সী কোন সেতসুকোর গল্প। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর কিশোর ভাইটি তার বোনকে নিয়ে বেঁচে থাকতে সংগ্রাম করে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সেটা সম্ভব হয় না। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় ইসাও তাকাহাতা পরিচালিত ‘গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইজ’। এখনো নানা সময় এ অ্যানিমে নিয়ে আলোচনা হয়। সিইতা ও সেতসুকোকে দেখে যে কারো নিজের ভাই বা বোনের কথা মনে পড়বে। প্রায় কোনো দর্শকই এটা দেখে অশ্রু সংবরণ করতে পারেন না।
ইয়োর নেম
জাপানের দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যানিমে নির্মাতাদের একজন মাকোতো শিনকাই। বহু জনপ্রিয় অ্যানিমের নির্মাতা তিনি। সেই সঙ্গে মাঙ্গার লেখকও বটে। তার অ্যানিমেগুলোর মধ্যে সেরার তালিকায় শুরুতে আছে ইয়োর নেম। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় অ্যানিমেটি। এখানে দুটো চরিত্রের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বদল ঘটে। থিমটি বেশ পুরনো। রবীন্দ্রনাথের ‘ইচ্ছাপূরণ’-এর সঙ্গে এর মিল আছে। এ থিমে আরো অনেক সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। তবে শিনকাইয়ের বিশেষত্ব হলো গল্প বলার ধরনে। সেই সঙ্গে জাপানের তরুণদের গল্প তিনি তুলে ধরেন। তাকি ও মিতসুহার এ গল্প তাই তরুণ ও টিনএজদের খুব পছন্দ হয়েছিল। এখনো বেশ পছন্দ এবং আলোচনা হয়। আইএমডিবিতে এর রেটিং ৮ দশমিক ৪।
প্রিন্সেস মনোনোকে
মিয়াজাকির একাধিক অ্যানিমে নিয়ে আলাপ হয়। তার সাম্প্রতিকতম ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ও নজর কেড়েছে। কিন্তু এ নির্মাতার প্রিন্সে মনোনোকে কম আলোচিত। এ অ্যানিমে ঘিবলির অন্যতম আইকনিক কাজ। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চারটি। জাপানের মুরোমাকি কালের গল্প এটি। এমিশি রাজকুমারী আশিতাকাকে নিয়ে গল্প এগোয়। আয়রন টাউন ও ফরেস্ট গডের মধ্যকার এ দ্বন্দ্ব দর্শক পছন্দ করেছেন। আইএমডিবিতে তাই অ্যানিমের রেটিং ৮ দশমিক ৫।
জিনতামা দ্য মুভি: দ্য ফাইনাল চ্যাপ্টার—বি ফরএভার ইয়োরোজুয়া
ইয়োইচি ফুজিতা নির্মাণ করেছেন এ অ্যানিমে। সিনেমা হলেও এর কয়েকটি পর্ব হয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু হয় এর যাত্রা। নানা ধরনের আবেগের মিশ্রণ পাওয়া যাবে অ্যানিমেটিতে। আবার এটিকে অনেকে ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যতের গল্পও বলেছেন। অ্যানিমেশনের দিক দিয়েও ভিন্নতা আছে। সব মিলিয়ে দর্শক পছন্দ করেছেন অ্যানিমেটি। বছরের পর বছর ধরে তারা দেখছেন এটি। আইএমডিবিতে ৮ দশমিক ৩ রেটিং পেয়ে সিরিজটি এগিয়ে আছে অনেকের থেকে।
হাউলস মুভিং ক্যাসল
রেটিংয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছে বলা যায় এ অ্যানিমে। আইএমডিবিতে পেয়েছে ৮ দশমিক ২। কিন্তু মিয়াজাকির এ কাজ দর্শকের খুব পছন্দ। নানা সময় এটি নিয়ে কথা হয়। ব্রিটিশ লেখক ডায়ানা ওয়েন জোনসের গল্প থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করেন মিয়াজাকি। ডায়ানার লেখা প্রকাশ হয় ১৯৮৬ সালে। মিয়াজাকি এ অ্যানিমে মুক্তি দেন ২০০৪ সালে। একটি ভাসমান প্রাসাদ, কতগুলো মানুষ আর তার মাঝে সোফি। তাকে নিয়েই গল্প।
আ সাইলেন্ট ভয়েস
নাওকো ইয়ামাদা নির্মাণ করেছেন আ সাইলেন্ট ভয়েস। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যানিমেটি আইএমডিবিতে ৮ দশমিক ১ রেটিং পেয়ে সেরা সাতে আছে। কামিং অব এজ ড্রামা বলা যায় একে। গল্পে শোয়া একজন বখাটে ছেলে। সে অন্যদের জ্বালিয়ে বেড়ায়। তারপর একঘরে করে সবাই তাকে। শোয়া তখন এক বধির মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। মেয়েটিকে এক সময় সে প্রচুর বুলিং করেছিল।