মোহনলালের অভিনয় পছন্দ করতেন বাসুদেব নায়ার

গত ২৫ ডিসেম্বর মারা গেলেন মালয়ালম সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এমটি বাসুদেব নায়ার। ১৯৩৩ সালে জন্ম তার।

গত ২৫ ডিসেম্বর মারা গেলেন মালয়ালম সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এমটি বাসুদেব নায়ার। ১৯৩৩ সালে জন্ম তার। মালয়ালম সাহিত্য ও সিনেমায় তার অবদান অনস্বীকার্য। বলা হয়, একজন ভারতীয় সাহিত্যিক নিজ জীবনে যা যা অর্জন করতে পারেন, বাসুদেব সবই করেছেন। নিজের পাশাপাশি মালয়ালি সিনেমা ও সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন উচ্চতায়। বাসুদেব রচিত মহাভারতভিত্তিক উপন্যাস ‘রান্দামুয়াম’। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসে ভীমের দৃষ্টিতে মহাভারতকে দেখা হয়েছে। এটি থেকে সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন ছিল বাসুদেবের। অভিনয় করার কথা মোহনলাল ও মামুত্তির। বাসুদেবের অন্যতম প্রিয় অভিনেতা মোহনলাল। তিনি চাইতেন, মোহনলালই ভীমের চরিত্রে অভিনয় করুন। সম্প্রতি এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মোহনলাল।

রান্দামুয়াম থেকে সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন বহু নির্মাতাই দেখেছেন। ২০১০ সালের দিকে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়। নির্মাতা হরিহরণ সিনেমাটি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সময়মতো শুরু করা যায়নি। এরপর ফিচার ফিল্ম নির্মাতা ভিএ শ্রীকুমার এ প্রজেক্ট নেন। কিন্তু তিনিও কাজটা এগোতে পারেননি। বাসুদেব নায়ার আইনি প্রক্রিয়ায় আবারো সিনেমার স্বত্ব নিজের নামে করে নেন। কিন্তু পুরো সময় ধরে একটা বিষয়ে অটল থেকেছেন—ভীমের চরিত্রে মোহনলাল অভিনয় করবেন। এখন বাসুদেবের মেয়ে অশ্বতী এ নিয়ে কাজ করছেন। তিনিও চান মোহনলাল ভীমের চরিত্রে অভিনয় করুন।

বাসুদেব নায়ারের গল্পে এর আগে মোহনলাল ১৯৮৪ সালে ‘উয়ারাঙ্গালিল’, ১৯৮৬ সালে ‘পঞ্চগনি’, ১৯৮৭ সালে ‘অমৃতম গময়া’, ১৯৯০ সালে ‘তাভারম’, ১৯৯২ সালে ‘সদায়ম’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এছাড়া বাসুদেব নিয়মিত মোহনলালের অভিনয় দেখতে যেতেন।

বাসুদেবকে স্মরণ করে মোহনলাল বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে ১০-১২টি সিনেমায় কাজ করার সুযোগ ও সম্মান পেয়েছি। প্রতিটি সিনেমাই উল্লেখ করার মতো। এর মধ্যে আমার প্রিয় হলো প্রিয়দর্শন পরিচালিত ‘ওলাভু থিরাভু’। এমটির গল্পগুলো ন্যায়নীতি ও আবেগের জায়গায় দারুণ শক্তিশালী। লেখার ক্ষেত্রে তিনি জানতেন, ছোট ছোট বাক্য দিয়ে কেমন করে জাদু তৈরি করা যায়। অবশ্য তার মতো মহান সাহিত্যিক সম্পর্কে মন্তব্য করার মতো যোগ্যতা আমার নেই।’

বাসুদেবের চিত্রনাট্য থেকে সিনেমা নির্মাণ করেছেন গুণী নির্মাতারা। তার সিনেমা অসাধারণ হওয়ার পেছনে নির্মাতাদেরও কৃতিত্ব দিয়েছেন মোহনলাল। তিনি বলেন, ‘এমটির সিনেমা ভালো হওয়ার আর একটা কারণ তার চিত্রনাট্য থেকে সিনেমা নির্মাণ করেছেন ভারত, আইভি শশীর মতো নির্মাতারা। সর্বশেষ এসেছেন প্রিয়দর্শন। তার স্বপ্ন ছিল এমটির চিত্রনাট্যে সিনেমা নির্মাণ করবেন।’

বাসুদেবের সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি তার সঙ্গে মোহনলালের হার্দিক একটি সম্পর্ক ছিল। মোহনলাল অভিনীত নাটক নিয়মিত দেখতেন বাসুদেব। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোহনলাল বলেন, ‘আমার অভিনয় তিনি পছন্দ করতেন। বহুদিন তিনি অনেক দূরত্ব পার করে আমার অভিনয় দেখতে আসতেন। তিনি সেসব নাটক দেখার পর তা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদের একটা হার্দিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।’

মোহনলালের মতে এমটি বাসুদেবের মৃত্যু মালয়ালম সাহিত্য ও সিনেমার জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। ওলাভু থিরাভুর মতো সিনেমা সহজে আসে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও