সম্প্রতি মারা গেলেন বিচ বয়েজ ব্যান্ডের ব্রায়ান উইলসন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কিংবদন্তি তিনি, সন্দেহ নেই। মৃত্যুর পর তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন তার সমসাময়িক বব ডিলান, পল ম্যাককার্টনি, জন কাইল, মিক ফ্লিটউড ও এলটন জন। উইলসনের ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পৃথিবী এক অসাধারণ মেধাবীর বিদায়ে আজ শোক করছে।’ উইলসন এ জনপ্রিয়তার তো স্বীকৃতি পেয়েছেন বহুদিনের পরিশ্রমে। তার মৃত্যুর পর তাই সংগীতাঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে, উইলসনের মতো কেউ আর কখনো আসবেন?
শিল্পের স্বীকৃতি ও তার স্থায়িত্ব নির্ভর করে মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে। একটা গান, ছবি বা সিনেমা যতদিন পর্যন্ত মানুষ গ্রহণ করবে ততদিনই এর মূল্য থাকবে। মানুষের প্রয়োজন, পছন্দ না থাকলে শিল্পের পাশাপাশি শিল্পীও মূল্যহীন। সেই জায়গা থেকে দেখা যায় ব্রায়ানের সংগীত বেঁচে আছে তা তৈরি হওয়ার ৬০ বছর পরও।
উইলসনের প্রতিভা নিয়ে প্রথম আলাপ শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। বিটলদের সাবেক পাবলিশিস্ট দেড়েক টেইলর একটা প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সেখানে উইলসনকে সামনে আনার চেষ্টা ছিল। মজার ব্যপার, উইলসন তার কাজেও এর প্রমাণ রেখেছিলেন। এরপর সবার মুখে ফিরতে শুরু করে ‘উইলসন একটা জিনিয়াস’ এবং সে প্রচলন এখনো চলমান।
এখন আরেকটা প্রশ্ন তৈরি হয়। এ সময়ে সংগীতে কোনো অসাধারণ মেধাবী নেই বলেই কি পুরনোদের জিনিয়াস বলে সুখে থাকতে হয়? অনেকেই গাইছেন, জনপ্রিয় হচ্ছেন, কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে বব ডিলান, ব্রায়ান উইলসন, দ্য বিটলস, দ্য রোলিং স্টোনস, জনি মিচেল বা ডেভিড বোয়ির মতো কাউকে আর পাওয়া যায়নি। এ সময়ের আর যারা জীবিত তাদের বয়স সত্তরের বেশি।
ব্রায়ান উইলসনদের (বব ডিলান, জন লেননদের সময়) পর সংগীতে জিনিয়াস হিসেবে পাওয়া গেছে মাইকেল জ্যাকসন ও প্রিন্সকে। তারা দুজনই খুব অল্প বয়সে মারা গেছেন। সে কারণে বলা চলে, বিশ্ব সংগীতে আর কিছুদিন পর ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’র অস্তিত্ব থাকবে না।
আবার এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সত্তরের দশকের পর সংগীতে নতুন বহু কিছু যুক্ত হয়েছে। তবে যুগান্তকারী কোনো ধারণা, ধারা তৈরি হয়নি। ড্রাম, কিবোর্ডসহ প্রযুক্তির সাহায্যে সংগীতে যুক্ত হয়েছে নতুন অনেক কিছু। সংগীত থেকে ব্যবসাও হচ্ছে, কিন্তু সংগীত একটা সময় মানুষকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, সে চর্চা এখন আর দেখা যায় না।
সংগীত তখনই কালোত্তীর্ণ হবে, যখন সেখানে শ্রোতা নতুন কিছু পাবে। এমন কিছু, যা তারা আগে শোনেনি। এমন ভাবনা যা তারা আগে ভাবেনি। দ্য বিটলস রীতিমতো কয়েকটা প্রজন্মের ভাবনায় প্রভাব রেখেছিল। মাইকেল জ্যাকসন সংগীতের সঙ্গে নাচের নতুন ধারা যোগ করেছিলেন। বব ডিলানের লিরিক নিয়ে এখন গবেষণা অবধি হয়। ব্রায়ান উইলসন একসময় গেয়েছিলেন, ‘আমি এ সময়ের মানুষ নই।’ হয়তো তিনি সবসময়ের মানুষ। যে কারণে বিচ বয়েজের সঙ্গে তার তৈরি গানগুলো শ্রোতারা এখনো শুনে থাকে।
এ সময় এড শিরান, টেইলর সুইফট, অ্যাডেলরা জনপ্রিয়। টেইলরের এক-একটা কনসার্টে বহু শ্রোতা সমাগম হয়। কিন্তু তাদের কোনো গান ৬০ বছর পর শ্রোতারা শুনবে কিনা তা বলা যায় না। এখন তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা যায় না। কিন্তু সংগীতে ব্রায়ানদের মতো মানুষ কমে যাচ্ছে তা স্পষ্ট। অনেকেই তাই নতুন ব্রায়ানদের খুঁজছেন।