নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ও
জয়া আহসান অভিনীত পেয়ারার সুবাস ছবিটি মুক্তির পথে আরো একধাপ এগোল। সম্প্রতি শেষ হয়েছে
ছবিটির পোস্ট প্রডাকশনের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ
সিনেমাপ্রেমীদের অনেক দিনের জিজ্ঞাসা কবে থেকে মুগ্ধতা ছড়াবে পেয়ারার সুবাস? কখন ডুবসাঁতার-এর মতো নির্মাতা নূরুল আলম আতিক ও অভিনেত্রী জয়া আহসানের যূথবদ্ধতায় তৈরি হবে আরো এক অনন্য চলচ্চিত্র? অনেকে ভেবে থাকতে পারেন, এ প্রশ্নগুলো হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে নির্মাতা নূরুল আলম আতিকের। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়, একদমই এড়িয়ে যাননি আতিক। তার ভাষায়, তিনি বরং দর্শকের এ আগ্রহ আমলেই রেখেছিলেন সযত্নে। এর প্রমাণ ধাপে ধাপে ছবিটির মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার খবরগুলো। সর্বশেষ জানা গেছে, গত রোববার জয়া আহসানের ডাবিংয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পেয়ারার সুবাস-এর পোস্ট প্রডাকশনের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই মিডিয়া প্রডাকশনস লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন শুধু বাকি আছে তাদের প্রযোজিত চলচ্চিত্র পেয়ারার সুবাস-এর কালার গ্রেডিং, সাউন্ড ও মিউজিকের কাজ। সব মিলিয়ে কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু প্রস্তুত হয়ে যাবে পেয়ারার সুবাস-এর।
এ নিয়ে আলফা আইয়ের স্বত্বাধিকারী
শাহরিয়ার শাকিল নিশ্চিত করে বলেছেন, নানা জটিলতায় দীর্ঘ চার বছর আটকে থাকলেও শিগগিরই পেয়ারার সুবাস
মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
পেয়ারার সুবাস-এর গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির
বৈবাহিক যৌনজীবনে পুরুষের আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টিকে; যা বেশির ভাগ বাঙালি
নারীর বৈবাহিক যৌনজীবনের অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করে।
গতকাল পেয়ারার সুবাস নিয়ে টকিজের মুখোমুখি হয়েছিলেন ছবিটির নির্মাতা নূরুল আলম আতিক। যদিও বরাবরের মতো শর্ত দিয়ে ঘেরা ছিল সে কথোপকথন। অর্থাৎ পেয়ারার সুবাস নিয়ে এখনই খুব বেশি কিছু বলতে নারাজ এ নির্মাতা। যদিও শেষ পর্যন্ত খোলস থেকে বের হয়ে এসে ছবিটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন আতিক। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘পেয়ারার সুবাস আসলে আমাদের একটা ডেসপারেট প্রজেক্ট। অনেক দিন পরের একটি কাজ হওয়া সত্ত্বেও এটির স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়েছিল খুবই তাত্ক্ষণিক সময়ের মধ্যে, বড়জোর সপ্তাহখানেকের মধ্যে গল্পটি তৈরি করা হয়েছিল। যে কারণে অনেক ভাবনা-চিন্তা বা অনেক সময় এর পেছনে দেয়া সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে এ রকম অভিজ্ঞতা আমার অন্য কাজগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেনি। সেগুলো সবই ছিল আগে থেকে ঠিকঠাক।’ মূলত ছবিটির নির্মাণযজ্ঞ শেষ হতে এত সময় লাগার পেছনে এ বিষয়টিকেই হাজির করলেন আতিক। ‘প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল যখন আমাকে দীর্ঘদিন ধরেই টেলিভিশন প্রডাকশনের কথা বলছিল। কিন্তু আমার তাতে কোনো সায় ছিল না। এরপর হঠাৎ করেই তিনি আমাকে পেয়ারার সুবাস নির্মাণের প্রস্তাব দেন। আমিও পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই রাজি হয়ে যাই। আসলে পুরো বিষয়টি নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এত লম্বা সময় লেগে গেল।’
শুধু গল্প তৈরি কিংবা আতিককে
ছবিটি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া নয়, চিত্রায়ণের বেলায়ও নাকি এমনটা ঘটেছিল। এ নিয়ে আতিক বলেন, ‘ছবিটিতে যিনি ক্যামেরার কাজ করেছেন, তিনি কোনোদিন মুভি ক্যামেরা করেননি। আমি তার তোলা স্টিল দেখে
মুগ্ধ হই এবং তিনি কাজ শুরু করেন। এক্ষেত্রে আমার গতি, অগতি কিংবা দুর্গতি
যা-ই বলুন না কেন, আমি এমন কোনো ক্যামেরা পারসনকে নিতে পারিনি, যাদের সঙ্গে এর আগে
আমার কাজকর্ম হয়েছে, আমি আসলে তাদের অ্যাপ্রোচ করতে পারিনি।’
তবে পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া এগোলেও
আতিক আত্মবিশ্বাসী তার পেয়ারার সুবাস নিয়ে। এ নিয়ে তার স্পষ্ট উত্তর, ‘আমি জানি এ ছবি আগে থেকেই ডিজাইন করা নয়। কিন্তু এ ছবি যেখানে গিয়ে পৌঁছাবে বলে
বিশ্বাস করি, তাতে অন্তর্গত এক গভীরতা আছে। আমি বলতে পারি পেয়ারার সুবাসের
গল্প দমবন্ধ জায়গাকে মুক্ত করার গল্প। এও বলতে পারি, এর গল্প এমন এক গল্প, যার মধ্যে আমরা সবাই
থাকি এবং যে গল্প আমরা কখনো করি না, সে রকম একটি গল্প এটি।’ আতিক বলে চলেন, ‘এ গল্প দেখে নানা রকমের সীমাবদ্ধতার
কথা মনে হবে। আমি এ গল্পের সীমার মধ্যে অসীমকে দেখতে পেয়েছি। সোজা কথায়, একখণ্ড বরফের হিমালয়
হওয়ার গল্প পেয়ারার সুবাস।’
কথা বলতে বলতে আতিক হঠাৎ থেমে যান এবং সতর্ক হয়ে বলেন, ‘গল্প নিয়ে আর বেশি আলোচনা করা যাবে না, এখানেই যবনিকা টানতে হবে।’
পেয়ারার সুবাস নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পথে। ঠিক এমন মুহূর্তে এ ছবির প্রধান চরিত্র, যাকে ঘিরে আবর্তিত পুরো গল্প, সেই জয়া আহসানকে নিয়ে প্রশংসা না করে পারলেন না আতিক। ‘সবাই জ্ঞাত জয়া আহসান যত্নশীল অভিনেত্রী। তার যত্নের ফলও আমরা জানি। এ (পেয়ারার সুবাসের) বেলায়ও তিনি তার স্বাক্ষর রেখেছেন। পেয়ারার সুবাস-এ জয়াকে এমনভাবে হাজির হতে দেখবে দর্শক, যা এর আগে কখনো তারা দেখেনি।’