ভারতীয় ক্রিকেটে অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটালেন ভিরাট কোহলি। ১২৩টি ম্যাচ, ৯২৩০ রান এবং ৬৮ ম্যাচে নেতৃত্ব— ১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই গৌরবময় পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চ যতিচিহ্ন এঁকে আজ টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন এই মডার্ন গ্রেট।
সোমবার (১২ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোহলি লিখেছেন, ‘১৪ বছর আগে প্রথমবার যখন সাদা জার্সি পরেছিলাম, তখন ভাবিনি এই যাত্রাটা আমাকে এমনভাবে বদলে দেবে। টেস্ট ক্রিকেট আমাকে পরখ করেছে, গড়ে তুলেছে, এমন অনেক শিক্ষা দিয়েছে যেগুলো সারাজীবন সঙ্গে থাকবে। বিদায় জানানো সহজ নয়, কিন্তু মনে হচ্ছে এটাই সঠিক সময়। আমি সবটা উজাড় করে দিয়েছি, এবং বিনিময়ে ক্রিকেট আমাকে তার চেয়েও অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে।‘
নেতৃত্বে গর্বের অধ্যায়
২০১৪ সালে এমএস ধোনির অবসরের পর থেকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব কাঁধে তুলে নেন কোহলি। তাঁর অধীনে ভারত জিতেছে ৪০টি টেস্ট, যা ভারতীয় ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কেবল গ্রায়েম স্মিথ, রিকি পন্টিং ও স্টিভ ওয়াহ—এই তিনজন অধিনায়কের চেয়ে কোহলির জয় সংখ্যা কম।
ব্যাট হাতে বর্ণাঢ্য এক যাত্রা
২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক, ২০১২ সালে প্রথম ফিফটি, এরপর ২০১৪-১৫ অস্ট্রেলিয়া সফরে ৬৯২ রানের ঝলক—প্রতিটি বছরেই তিনি নিজেকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে টেস্টে তার ব্যাট গড়েছে সোনালি অধ্যায়— ২০১৬ সালে গড় ছিল ৭৫ দশমিক ৯৩, ২০১৭ সালে ৭৫ দশমিক ৬৪, ২০১৮-তে ৫৫ দশমিক ০৮ এবং ২০১৯ সালে ৬৮।
বিশেষ করে ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফর ছিল মনে রাখার মত। ইংলিশ কন্ডিশনে জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডদের বিরুদ্ধে তিনি করেছিলেন সর্বোচ্চ ৫৮৩ রান। এর আগের সফরে মাত্র ১৩৪ রান করায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কোহলি। বার্মিংহাম ও নটিংহাম টেস্টে তার সেঞ্চুরি অনেক দিন ধরেই হয়তো টেস্ট ব্যাটিংয়ের ম্যানুয়ালে স্থান পাবে।
শেষ কটি বছর ও অবসরের সিদ্ধান্ত
শেষের দিকে কোহলির পারফরম্যান্সে দেখা যায় কিছুটা ভাটার টান। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পার্থে করা শতক ছিল টেস্টে তার দেড় বছরের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি। গত ২৪ মাসে তার গড় নেমে আসে ৩২ দশমিক ৫৬-তে। তবুও অভিজ্ঞতার জন্য তাকে ইংল্যান্ড সফরের দলে রাখার কথা ভাবছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু কোহলি আগেভাগেই বোর্ডকে জানিয়ে দেন, এবার সময় হয়েছে সরে দাঁড়ানোর।
বিসিসিআইর সর্বোচ্চ চুক্তির আওতায় থাকা ভিরাট ও রোহিত দুজনেই এখন কেবল ওডিআই ফর্ম্যাটে খেলবেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর তারা সেই ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির অধ্যায় শেষ হলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে থেকে যাবে তার আগ্রাসী ব্যাটিং, অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্ব আর সাদা পোশাকের প্রতি সেই আবেগ যা তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা আইকনে পরিণত করেছে।