লা লিগায় মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় গত অক্টোবরে সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বার্সেলোনা। তবে উড়তে থাকা বার্সাকে ক্রিসমাসের আগেও মনে হয়েছে ক্লান্ত ও উদ্দীপনাহীন। বার্সার একের পর এক পয়েন্ট হারানোর বিপরীতে ঘুরে দাঁড়িয়ে লিগের পয়েন্ট টেবিলে হানসি ফ্লিকের দলকে পেছনে ফেলেছে মাদ্রিদ। প্রতিশোধের ক্ষেত্র প্রস্তুতই ছিল কার্লো আনচেলত্তির দলের জন্য। ম্যাচের শুরুতে কিলিয়ান এমবাপ্পের দারুণ গোলে সেই ইঙ্গিতও ছিল। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। আরো একবার বার্সার গতিময় ফুটবলের সামনে স্রেফ উড়ে গিয়েছে মাদ্রিদের গ্যালাক্টিকো ২.০। ৪ গোলের ক্ষত সারানোর অভিযানে বার্সেলোনার কাছে ৫-২ গোলে হেরে আনচেলত্তি বলতে বাধ্য হচ্ছেন, প্রথমার্ধে তারা ফুটবলই খেলতে পারেননি।
সেটা তিনি বলতেই পারেন। লিগের রোমাঞ্চকর যাত্রার মাঝে গতকাল রোববার স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বছরের প্রথম এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামের ম্যাচের প্রথমার্ধেই হয়ে যাওয়া ৫ গোলের ৪টি যে হজম করেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। এমবাপ্পের গোলে লিড নেয়ার পরই যে মাদ্রিদের গল্পের কার্যত সমাপ্তি ঘটবে তা তো শুরুতে অজানাই থাকার কথা। তাছাড়া, যে ম্যাচে প্রথমার্ধেই ৫ গোল হয় আর আহত পক্ষের নাম রিয়াল মাদ্রিদ, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধ অনেক বড়ই হওয়ার কথা। আক্ষরিক অর্থে তাই হয়েছে। প্রথমার্ধে অতিরিক্ত ৯ মিনিটের পর দ্বিতীয়ার্ধে ইনজুরি টাইম দেয়া হয়েছিল ১০ মিনিট। তবে তাতে রিয়ালের কোনো লাভ হয়নি। গোলরক্ষক সেজনি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর প্রায় ৪০ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলে রিয়ালের ওপর শুধুই ছড়ি ঘুরিয়েছে হান্সি ফ্লিকের বার্সা। ভিনিসিয়ুস-এমবাপ্পেরা আবারো ছিলেন দর্শক আর একের পর এক গোল উদযাপন করেছেন লামিন ইয়ামাল-লেভানদোভস্কি-রাফিনিয়ারা।
ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দুটি সেইভ করেন মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। তবে বার্সার কর্নার থেকে পাল্টা আক্রমণে ওঠে আনচেলত্তির দল। বার্সা মিডফিল্ডার কাসাদোর থেকে বল কেড়ে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে এমবাপ্পেকে বল বাড়ান ভিনিসিয়াস। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে বার্সার বক্সে ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে মাটি কামড়ানো শটে ফার পোস্টে বার্সা গোলকিপার সেজনিকে পরাস্ত করেন এমবাপ্পে। কাউন্টার অ্যাটাকে মাদ্রিদ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
ম্যাচে ফিরতে এরপর একের পর এক আক্রমণের ঢেউ তুলতে থাকে বার্সা। ২২ মিনিটে লেভানদোভস্কির থ্রু ধরে বক্সের ডান দিক থেকে মাদ্রিদের ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করে কাটিয়ে বাঁ দিকে এগিয়ে শট নেন লামিন ইয়ামাল। লিওনেল মেসিকে মনে করিয়ে দেয়া ইয়ামালের নিচু শট ডান দিকের পোস্ট ঘেঁষে বল আশ্রয় নেয় জালে।
ম্যাচের ৩৪ মিনিটে নিজেদের বক্সে বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকে ফাউল করেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। স্পটকিক থেকে বার্সাকে এগিয়ে দেন লেভানদোভস্কি। এর ৩ মিনিট পর চোখে লেগে থাকা এক গোলে স্কোরশিটে নাম লেখান আগের এল ক্লাসিকোতে জোড়া গোল করা রাফিনিয়া। ডান প্রান্ত থেকে জুলস কুন্দের নিখুঁত ক্রসে দুর্দান্ত এক জোরালো হেডে স্কোরলাইন ৩-০ করে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
প্রথমার্ধের যোগ করা ১০ মিনিটের নবম মিনিটে মাদ্রিদের কর্নার থেকে বল পেয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গিয়ে রাফিনিয়াকে বল বাড়ান ইয়ামাল। দারুণ গতিতে বক্সের দিকে যাওয়া ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভালভার্দেকে সুযোগ না দিয়ে পাস দেন বার্সার লেফট ব্যাক বালদেকে। সে পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন তিনি।
৪-১ গোলের লিড নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু করে তৃতীয় মিনিটেই স্কোরলাইন ৫-১ করে ফেলে হান্সি ফ্লিকের দল। এবারও কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে ডান পায়ে একজনকে কাটিয়ে বাঁ পায়ে গোল করলেন এই সেলেসাও ফরোয়ার্ড। ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয় এবং চলতি মৌসুমে ১৯তম গোল। ৫৬ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বার্সেলোনা। এমবাপেকে ডি-বক্সের বাইরে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন গোলরক্ষক সিজনি। পরে ইনাকি পেনা নামেন গোলবার সামলাতে, দলের কম্বিনেশন মেলাতে ইয়ামালকে তুলে নিয়ে দানি ওলমোকে নামান বার্সা কোচ ফ্লিক।
সেই ফাউলের পর ভিএআরের কল্যাণে ফ্রি-কিক পায় রিয়াল। দারুণ সেটপিসে গোল করে বার্সার সঙ্গে ব্যবধান কমান রদ্রিগো। এরপর প্রতিপক্ষ একজন নিয়ে লড়াই করলেও আর জালের দেখা পায়নি রিয়াল। বাকি সময়ের বেশিরভাগ সময় নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল বার্সা। এই সময়ে দুই দল একের পর এক শারীরিক লড়াইয়েও জড়ায়।
এ জয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে ১৫তে নিয়ে গেল বার্সা। একই সঙ্গে সর্বশেষ মৌসুমে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধটাও নিল দারুণভাবে।