চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু আজ

স্বাগতিকদের সিরিজ ড্র করার চ্যালেঞ্জ

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল দীর্ঘ ২৪ বছর বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতেনি। দুই যুগ পর অবশেষে অপূর্ব সুযোগ এসেছে তাদের সামনে। চট্টগ্রামে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল দীর্ঘ ২৪ বছর বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতেনি। দুই যুগ পর অবশেষে অপূর্ব সুযোগ এসেছে তাদের সামনে। চট্টগ্রামে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এ টেস্টে ন্যূনতম ড্র করলেই সিরিজ জিতে নেবে ক্রেগ আরভিনের দল। বাংলাদেশের জন্য সমীকরণটা অবশ্য ভিন্ন। সিলেটে প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় স্বাগতিকদের সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রাম টেস্টে জিততেই হবে। নাজমুল হোসেন শান্তরা হারলে কিংবা ড্র করলে সিরিজের ট্রফি পেয়ে যাবে জিম্বাবুয়ে। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ সকাল ১০টায় শুরু হবে প্রথম দিনের খেলা।

সিলেটে শেষ মুহূর্তে জমে ওঠা ম্যাচ জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় অতিথি দলকে ১৭৪ রানের ছোট টার্গেট দিতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। মিরাজ ও তাইজুলের বীরত্বে এ রান নিয়েও লড়াই করে স্বাগতিকরা। দুজনের দাপটে অতিথি দলটি জিতলেও তাদের ৭ উইকেটের পতন ঘটে। টাইগারদের পরাজয়ে বিফলেই যায় মিরাজের ১০ উইকেট।

সিলেটে জিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবধান কমায় জিম্বাবুয়ে। এখন পর্যন্ত ১৯ টেস্টের লড়াইয়ে আটটি জিতেছে তারা। বাংলাদেশের মাটিতে হয়েছে ১১টি টেস্ট, যার মধ্যে বাংলাদেশ ছয়টি ও জিম্বাবুয়ে তিনটি জয় পায়। এ তিনটির মধ্যে দুটিই সিলেটে। তৃতীয় জয়টি তারা পেয়েছে চট্টগ্রামে। ২০০১ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে টেস্টের নবাগত দল বাংলাদেশ আট উইকেটে হেরে যায় তখনকার তারকাখচিত জিম্বাবুয়ের কাছে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার নিয়েছিলেন ম্যাচে ৮ উইকেট। ফ্লাওয়ারের ১০৪ রানে নেয়া ৮ উইকেটই এতদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো জিম্বাবুইয়ান বোলারের সেরা বোলিং ফিগার ছিল। সিলেটে ১২২ রানে ৯ উইকেট নিয়ে ফ্লাওয়ারকে টপকে যান ব্লেসিং মুজারাবানি।

এরপর চট্টগ্রামে দুটি টেস্ট খেলে বড় ব্যবধানে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। ২০০৫ সালে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ২২৬ রানে ও ২০১৪ সালে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৮৬ রানে জিম্বাবুয়েকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশে আর কখনো টেস্ট সিরিজ জেতেনি জিম্বাবুয়ে, এমনকি অন্য কোনো দেশেও টেস্ট সিরিজ জেতা হয়নি তাদের। অবশেষে বিদেশে সিরিজ জয়ের হাতছানি আরভিনদের সামনে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নাম বদলে রাখা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখানেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে লড়বে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। নাম বদলের আগে এ ভেন্যুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও জয় খুব বেশি নেই। মাত্র দুটি জয়ের পাশাপাশি ১৬টিতে হেরেছে বাংলাদেশ আর সাতটি ম্যাচ হয়েছে ড্র।

দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ওপেনিং ব্যাটার এনামুল হক বিজয়কে ডাকা হয়েছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অনবদ্য ফর্ম দেখিয়ে টেস্ট দলে আসা বিজয় আজ একাদশে সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। পেস বোলার নাহিদ রানা নেই দ্বিতীয় টেস্টে। তার জায়গায় আসা স্পিনার তানভির ইসলামকে খেলাবে বাংলাদেশ, নাকি পেস বোলার তানজিম হাসান সাকিবের অভিষেক ঘটবে, তা জানা যাবে আজ সকালেই।

এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ ফিল সিমন্স জানালেন, তার দল ইতিবাচক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলবে। এ ক্যারিবীয় কোচ বলেছেন, ‘আমরা জানি, প্রথম ম্যাচে দল হিসেবে ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি এবং নিজেদের সমস্যায় ফেলেছি। এখন আমাদের ভাবনা হলো ইতিবাচক ব্র্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চাই। এমন নয় যে সারা দিন ব্যাটিং করে ২০০ রান করব। উইকেট খুবই ভালো মনে হচ্ছে। বেশ শক্ত, মসৃণ এবং কিছুটা শুষ্ক। ম্যাচের পরের দিকে কিছুটা টার্ন আশা করতে পারি, যা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।’

জিম্বাবুয়ে প্রায় চার বছর পর টেস্ট জিতেছে। এখন তাদের সামনে সিরিজ জেতার হাতছানি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৪ সালের পর প্রথমবার দুই বা ততোধিক ম্যাচের সিরিজ জয়ের সুযোগ তাদের সামনে এবং ২০০১ সালের পর দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয়ের হাতছানি।

দীর্ঘ খরা ঘোচানোর সম্ভাবনাকে বাড়তি চাপ হিসেবে নিতে চান না জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রথম ম্যাচটি জেতার প্রক্রিয়াটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এমন নয় যে ১-০তে এগিয়ে থাকায় আমরা নিজেদের ওপর চাপ নিয়ে নেব। অবশ্যই সিরিজ জয়ের একটা প্রত্যাশা থাকবে। ছোট ছোট ধাপে ভাগ করতে হবে এবং প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে। যত লম্বা সময় এটি করতে পারব, তত আমাদের সুযোগ বাড়বে। এখনই ম্যাচের ফল নিয়ে ভাবলে হবে না।’

গত বছর পাকিস্তানে দুটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি টেস্ট জিতলেও ঘরের মাঠে বিপর্যয় ঘটে টাইগারদের। তারা মার্চে শ্রীলংকার কাছে ও অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এবার জিম্বাবুয়ের কাছেও ২-০তে হারের লজ্জা এড়াতে পারবেন কি শান্ত-মিরাজরা?

আরও