টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশের যাত্রা ২০০০ সালের নভেম্বরে। ঢাকার তৎকালীন বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর সাড়ে ২৪ বছরের পথচলায় আরো ১৫০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। দেড়শ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে সামান্যই। এখন পর্যন্ত ১৫১ টেস্টের মধ্যে মাত্র ২২টি জিতেছে বাংলাদেশ, যা ১৪.৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশ হেরেছে ১১১টি, যা ৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ড্র হয়েছে ১৮ ম্যাচ।
সর্বশেষ বুধবার সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে তিন উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এটা জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশের অষ্টম হার। ২০২১ সালের পর প্রথমবার দেশের বাইরে জিতল জিম্বাবুয়ে। সর্বশেষ জয়ও ছিল এই সিলেটে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৮টি টেস্ট জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। দুই দেশ এখন পর্যন্ত ১৯টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে। আগামীকাল চট্টগ্রামে শুরু হবে দুই দেশের ২০তম টেস্ট লড়াই। বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে উভয় দেশের কাছেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে।
শ্রীলংকার কাছে ২০টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৫টি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের কাছে ১৪টি করে, ভারতের কাছে ১৩টি, পাকিস্তানের কাছে ১২টি, ইংল্যান্ডের কাছে ৯টি, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫টি ও আফগানিস্তানের কাছে ১টি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতকে টেস্টে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে ১৫ টেস্ট খেলে ১৩টিতে ও প্রোটিয়াদের সঙ্গে ১৬ টেস্ট খেলে ১৪টিতে হেরেছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে (২৮টি)। জয়ও এই মাঠেই সর্বোচ্চ (৮টি)। শেরেবাংলায় স্বাগতিকরা হেরেছে ১৭টি, বাকি ৩টি ম্যাচ ড্র হয়।
এছাড়া ১৫১টি টেস্টের মধ্যে নিজেদের মাঠে ৮০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে হার ৫৩টিতে, আর জয় এসেছে ১৩টি। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল ড্র করেছে ১৭টি ম্যাচ। টাইগাররা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি ম্যাচ খেলেছে শ্রীলংকায়। এর মধ্যে ১টি জয় পেলেও তারা হেরেছে ১১টিতে।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ৭১টি। এর মধ্যে ৫৮টিতে হারের বিপরীত জিতেছে ৯টিতে, ড্র করেছে ৮টি ম্যাচ। বিদেশের মাঠে ২০০৯ সালে প্রথমবার টেস্ট জয়ের গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। সেবার খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। এছাড়া ২০১৩ সালে হারারে টেস্ট, ২০১৭ সালে কলম্বো টেস্ট, ২০২১ সালে কলম্বো টেস্ট, ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট, ২০২৪ সালে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট (২টি) ও কিংস্টন টেস্ট জিতেছে টাইগাররা।
অভিষেকের পর টানা ৩৪টি টেস্ট হারার পর প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৩৫তম টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক ছিলেন স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। ৩৮১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে এনামুলের ঘূর্ণির সামনে পড়ে ১৫৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা।
টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড, আর সবচেয়ে বেশি জয়ের কীর্তিটা অস্ট্রেলিয়ার। ১৮৭৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৮৩টি ম্যাচ খেলেছে ইংলিশরা। তারা জিতেছে ৪০০টি, হার ৩২৮টি আর ড্র করেছে ৩৫৫টি ম্যাচ। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ৮৭৩টি ম্যাচ খেলে ৪১৯টি জয় তুলে নিয়েছে। অজিরা হেরেছে ২৩৩টি ম্যাচ, ড্র করে তারা ২১৯ ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৭২ ম্যাচ খেলে ১৮৫টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৮৪ ম্যাচ খেলে ১৮৫টি, ভারত ৫৮৯ ম্যাচ খেলে ১৮১টি, পাকিস্তান ৪৬৫ ম্যাচ খেলে ১৫১টি, নিউজিল্যান্ড ৪৭৮ ম্যাচ খেলে ১১৯টি, শ্রীলংকা ৩২৫ ম্যাচ খেলে ১০৬টি, বাংলাদেশ ১৫১ ম্যাচে ২২টি, জিম্বাবুয়ে ১২২ ম্যাচে ১৪টি, আফগানিস্তান ১১ ম্যাচে ৪টি ও আয়ারল্যান্ড ১০ ম্যাচে ৩টি জয় পেয়েছে।
টেস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম বোলার সাকিব আল হাসান। ৭১ টেস্টে ২৪৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৫২ টেস্টে ২১৯ উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলাম দুইয়ে ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৫২ টেস্টে ২০০ উইকেট নিয়ে তিনে অবস্থান করছেন।
ব্যাটিংয়ে সেরা মুশফিকুর রহিম। ৯৫ টেস্টে ৬ হাজার ১৫ রান করেছেন তিনি। ৭০ টেস্টে ৫ হাজার ১৩৪ রান নিয়ে তামিম ইকবাল দুইয়ে ও সাকিব ৭১ টেস্টে ৪ হাজার ৬০৯ রান নিয়ে তিনে অবস্থান করছেন। ৭০ টেস্টে ৪ হাজার ৫১৫ রান করেছেন মুমিনুল হক সৌরভ।