টি-টোয়েন্টিতে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের সামনে কোনো রেকর্ডই আর নিরাপদ নয়! প্রতিপক্ষ দলগুলোকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে দলটি। শুক্রবার জোহানেসবার্গে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ১ উইকেটে ২৮৩ রানের সৌধ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় ভারত। সূর্যকুমার যাদবের দল সিরিজ জিতে নিল ৩-১-এ। ২০২৪ সালে ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ২৪টি জয় পেল ‘মেন ইন ব্লু’রা।
ভারত হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে এ সিরিজে একটি ও গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের মাঠে একটি। এছাড়া বাকি ২৪টি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে তারা। ব্রিজটাউনে বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর পরই খর্বশক্তির দল নিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে সেই হারের স্বাদ পায় শুভমন গিলের দল।
ওই সফরেই পরের তিনটি ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করে ভারত। পরে তারা সূর্যকুমারের নেতৃত্বে শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা সিরিজ জিতেছে। জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর ১৪ ম্যাচ খেলে ১২টি জয় পায় ভারত, একটি হার ও একটি ম্যাচ টাই হয়।
শুক্রবার ভারতের করা ২৮৩ রান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ স্কোর। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৩৪৪ রানের রেকর্ডটা জিম্বাবুয়ের গড়া। গত মাসে নাইরোবিতে আফ্রিকার দল গাম্বিয়ার বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৪৪ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে সিকান্দার রাজার দল। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। গত মাসে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ২৯৭ রান এই ফরম্যাটে তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ভারতই একমাত্র দল টি-টোয়েন্টিতে যাদের আছে তিনটি আড়াইশ-ঊর্ধ্ব সংগ্রহ। দুটি করে আড়াইশ-ঊর্ধ্ব সংগ্রহ আছে জাপান, জিম্বাবুয়ে ও চেক রিপাবলিকের। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে তিনটি আড়াইশ-ঊর্ধ্ব সংগ্রহের কীর্তি আছে সারে ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের।
এদিন সেঞ্চুরি করেন ভারতের তিলক ভার্মা ও সাঞ্জু স্যামসন। তিলক ৪৭ বলে ৯ বাউন্ডারি ও ১০ ছক্কায় ১২০ এবং সাঞ্জু ৫৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৯ ছক্কায় ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেন ২১০ রান। এটা যেকোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ রানের জুটি। রিংকু সিং ও রোহিত শর্মার ১৯০ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তারা। এটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। তারা ভেঙে দিয়েছেন ডাচ খেলোয়াড় সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও মাইকেল লেভিটের ১৯৩ রানের রেকর্ডটা।
শুরুতেই ঝড় তোলে ভারত। সাঞ্জু ও অভিষেক শর্মার ঝড়ে ৩৫ বলে ৭৩ রান তুলে নেয় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ষষ্ঠ ওভারে ১৮ বলে ৩৬ রানের টর্নেডোর পর সাজঘরে ফেরেন অভিষেক। তাতে অবশ্য রানের গতি কমেনি ভারতের। এরপর তিলক ভার্মা ও সাঞ্জু স্বাগতিক বোলারদের অসহায় বানিয়ে একের পর এক বলকে মাঠের বাইরে আছড়ে মারতে থাকেন। এ দুজন ৮৬ বলে ২১০ রানের দানবীয় এক জুটি গড়েন।
টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়েও বড় দলীয় সংগ্রহ আছে ভারতের। গত মাসেই হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের সৌধ গড়েছিল ভারত। ওই ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন সাঞ্জু। এরপর ডারবানে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে করেন সেঞ্চুরি। দুই ম্যাচে টানা ‘ডাক’ পাওয়ার পর আবারো সেঞ্চুরি। তিলক ভার্মা টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। ১৩ নভেম্বর সেঞ্চুরিয়নে সেঞ্চুরি করার পর শুক্রবার আরেকবার তিন অংক পেরিয়েছেন তিনি।
দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে তিনি ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ ও ২৮০ রান করে ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ হয়েছেন।