কোপা দেল রে ফাইনাল

মহাকাব্যের শেষ অধ্যায়ে কুন্দের বজ্রাঘাতে শিরোপা বার্সার, মাদ্রিদ ছাইভস্ম

একবার এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়া, শেষ মিনিটে পেনাল্টি পাওয়ার সম্ভাবনা জাগানো, এবং অতিরিক্ত সময়ে সেই রুদ্ধশ্বাস জয়—এ যেন এক মহাকাব্যিক ম্যাচ। রিয়াল মাদ্রিদ লড়েছে, বিদ্রোহ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হার মানতে হয়েছে তাদের।

রাত তখন গভীর, খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের মাত্র চার মিনিট বাকি থাকতে জুলস কুন্দে রিয়াল মাদ্রিদের জালে বল জড়ালে সেভিয়ার আকাশে জ্বলে উঠল আতশবাজি। স্টেডিয়ামের নীল-লাল সমর্থকরা তখন উন্মত্ত। ১১ বছর পর কোপা দেল রের ক্লাসিকো ফাইনাল পেল তার জয়ী—এবং তা হল ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা।

একবার এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়া, শেষ মিনিটে পেনাল্টি পাওয়ার সম্ভাবনা জাগানো, এবং অতিরিক্ত সময়ে সেই রুদ্ধশ্বাস জয়—এ যেন এক মহাকাব্যিক ম্যাচ। রিয়াল মাদ্রিদ লড়েছে, বিদ্রোহ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হার মানতে হয়েছে তাদের।

এটা কেবল ‘দুই অর্ধের’ খেলা ছিল না, ছিল চারটি অর্ধের এক অনবদ্য যুদ্ধ। পেদ্রি, কিলিয়ান এমবাপে, অরেলিয়া শুয়ামেনি এবং ফেরান তোরেস গোল করেছেন; আর শেষের পরতে এসে নায়ক হলেন কুন্দে। নাটকীয়তার শেষ নেই—রেফারিদের সিদ্ধান্ত, ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির বিতর্কিত হস্তক্ষেপ, মাঠের উত্তাপ—সব মিলে এক প্রকৃত ক্লাসিকো।

ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকতে বার্সেলোনা পেনাল্টি পায়। রিকার্ডো দে বুরহোস বেনগোচেয়া বাঁশি বাজান। ভিডিও রেফারি পাবলো গনজালেস ফুয়ের্তেস তাকে স্ক্রিনে ডেকে পাঠান। কয়েক মিনিট উত্তেজনা, আলোচনা, চাপের পর সিদ্ধান্ত বদলে যায়—পেনাল্টি বাতিল। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে, যেখানে অপেক্ষা করছিল কুন্দের সেই স্বর্ণালি মুহূর্ত।

মাদ্রিদকে ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বয়কট না করার জন্য। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে দুই দলই নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছে, সম্মান বাড়িয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বিতার।

খেলার শুরু থেকেই বার্সা আধিপত্য দেখায়। প্রথমার্ধে পেদ্রির অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। রিয়ালের দুটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। মনে হচ্ছিল বার্সেলোনা নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাদ্রিদের পাল্টা ঝড়—এমবাপে, আরদা গুলার, লুকা মদ্রিচের আগমন পুরো ছবিটাই বদলে দেয়।

ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের ফাউলে এমবাপে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ঢঙয়ে উদযাপন করেন: ‘চুপ থাকো, আমি এসেছি।‘ এরপর শুয়ামেনির হেডে এগিয়ে যায় মাদ্রিদ। বার্সাকে কোণঠাসা করে ফেলা রিয়াল তখন মৌসুমের প্রথম শিরোপার ঘ্রাণ পাচ্ছে। খেলার ধারার বিপরীতে ফেরান তোরেসের গোলে ফের সমতায় ফেরে বার্সেলোনা।

শেষ মুহূর্তের উত্তেজনায় রাফিনিয়ার ওপর ফাউলের অভিযোগ ওঠে। দেয়া হয় পেনাল্টি, আবার তা বাতিল—দর্শকরা দম বন্ধ করে রেখেছিলেন। অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই বারবার আক্রমণে যায়, মিস হয় সম্ভাবনা। অবশেষে ১১৬ মিনিটে কুন্দে ছোড়েন ক্ষেপণাস্ত্র আর ফলাফলে আসে নিষ্পত্তি।

হাই লাইন ডিফেন্সের ঝুঁকি নিয়ে খেলা বার্সেলোনার অফসাইডের ফাঁদে বাতিল হয় মাদ্রিদের তিনটি গোল। শেষ পর্যন্ত কোপা দেল রে ট্রফি নিজেদের করে নেয় ব্লগ্রানারা।

এদিকে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার খানিক আগে আরেক দফা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ক্লাসিকো। এমবাপেকে ফাউলের পরও ফ্রি-কিক না দেয়ায় রিয়ালের বেঞ্চ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। রেফারি বেনগোচেয়ার দিকে ধেয়ে যেতে থাকেন ক্ষিপ্ত রুডিগার। সতীর্থরা কোনোভাবে তাকে থামিয়ে রাখেন। উত্তেজনা চরমে ওঠে—রিয়ালের বেঞ্চ থেকে রেফারির দিকে ফ্লেয়ার জাতীয় কিছু একটা ছুঁড়ে মারা হয়। মাঠজুড়ে তখন উত্তেজনার বিস্ফোরণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেফারি রুডিগারকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। কিছুক্ষণ পর লুকাস ভাসকেজও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। লাল কার্ড দেখেন জুড বেলিংহামও। ক্লাসিকোর মহারণ তখন যেন পরিণত হয় এক দগদগে আগুনের লড়াইয়ে।

শিরোপাহীন মৌসুম কাটানোর শঙ্কায় ক্ষুব্ধ রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে আগুনঝরা লড়াইয়ের আরেকটি স্মরণীয় রাত কাটিয়ে উল্লাস করছে হান্সি ফ্লিকের বার্সা। তাদের চোখে এখন লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা হাতে তুলে আরেকটি ট্রেবল-জয়ের হাতছানি।

আরও