আগামী মাসে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য আজ রোববার দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই দলে নেই সাকিব আল হাসান, যিনি সদ্যিই বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। জায়গা হয়নি উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাসেরও। ওয়ানডেতে ফর্মহীনতার কারণে তাকে বিবেচনা করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
সাকিব বোলিং অ্যাকশনজনিত আর রাজনৈতিক কারণে অনেকদিন ধরেই দলের বাইরে। বর্তমানে যারা খেলেন তাদের মধ্যে লিটনের বাদ পড়াই বেশ আলোচিত। তিনি অবশ্য ফর্মহীনতার কারণেই বাদ। ওয়ানডেতে সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে ফিফটি পাননি। এর মধ্যে আবার সাত ইনিংসে এক ডিজিটে আউট হয়েছেন।
প্রধান নির্বাচক তার রানখরার বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘লিটন আউট অব ফর্ম। আউটের প্যাটার্ন অনেকটা একইরকম। সাদা বলে পাওয়ার প্লেতে যে সুবিধা নেয়া দরকার, সেটা হচ্ছে না। ক্রিজে টিকে থাকতে পারছে না। এক্সপোজ হয়ে গেছে। বিপক্ষ দলের অ্যানালিস্টরা লিটনের বিপক্ষে অনেক বেশি সফল হয়ে যাচ্ছে। তবু সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আস্থার জায়গাটা এই মুহূর্তে সেই অবস্থানে নেই।’
২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৬৬ রান করার পর ১৩ ইনিংসে ফিফটির দেখা নেই লিটনের ব্যাটে।
ওপেনিং জুটি নিয়ে বিকল্প ভাবনার কথাও জানান প্রধান নির্বাচক, ‘সৌম্য ও তামিম জুটি হিসেবে ভালো করছে। এই দুজনই সম্ভবত ইনিংস শুরু করবে। তাই লিটনের জায়গা নেই। তার ক্লাস নিয়ে সন্দেহ নেই। ফর্মে সংকট দেখা দিলে সেখান থেকে বের করতে যদি কাজ করতে পারি তাহলে তাকে ভালোভাবে বের করে আনতে পারব। আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করার সুযোগ পাবে এই সময়ে।’
লিটনকে বাদ দেয়া নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘লিটনের অতীত পারফরম্যান্স, ইতিহাস অবশ্যই দেখা হয়। নিকট অতীত বেশি দেখা হয়। উইন্ডিজে আমরা সব ম্যাচেই রান করেছি। দুই ম্যাচে তিনশ পেরিয়েছি। উইকেট খুব ভালো ছিল। সেখানেও (লিটন) ফেল করায় তার ওপর আত্মবিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমরা রাওয়ালপিন্ডিতে খেলব। খুব ভালো ব্যাটিং উইকেট। নিউজিল্যান্ড ৩৩৬ করেও হেরে গেছে। টপ অর্ডারই রান করেছে। অর্থাৎ ওপর থেকেই রান আসতে হবে। তাই আউট অব ফর্ম কাউকে নিতে পারছি না। টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংও কঠিন চ্যালেঞ্জ থাকবে।’
লিটন দাসের জায়গা নিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। তাকে দলভুক্ত করা নিয়ে লিপু বলেছেন, ‘আমরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছি। তার মধ্যে সাহস আছে, আগ্রাসী মনোভাব আছে। যে কোনো পরিস্থিতিতেই আগ্রাসী ব্যাটিংটা করতে পারে। আমরা তার মধ্যে সাহস দেখছি। বিষয়টি এমন নয় যে, কিছু রান করা প্রয়োজন তাই করি। তার হয়তো বড় ধরনের কোনো অবদান নেই। তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, আমরা যেটা খুঁজছি, তা হলো পাওয়ার প্লেতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। তার মধ্যে সব সময় একটা আক্রমণাত্বক মানসিকতা দেখা যায়, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো একটি বৈশ্বিক আসরে এমন ব্যাটার প্রয়োজন।’
সাকিব ও লিটনের বাইরেও পেস বোলার শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও ব্যাটার আফিফ হোসেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দলে জায়গা পাননি। পেস ব্রিগেডে আছেন তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও নাহিদ রানা। স্পিনার হিসেবে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদ।
সদ্যই অবসর নিয়েছেন তামিম ইকবাল। তিনি অবসর না নিলে তাকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দেখা যেত। লিপু তামিমের এই সিদ্ধান্তকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে অভিহিত করে জানিয়েছেন, তার মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন নক্ষত্রের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান দেখাতে চান। সাকিবের ক্ষেত্রে কাজটা ‘সহজ’ হয়েছে নির্বাচকদের জন্য। কেননা অ্যাকশনের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি বোলিং করতে পারবেন না। শুধু ব্যাটার হিসেবে তাকে দলভুক্ত করা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচক।
শান্ত অধিনায়ক হয়েই ফিরছেন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ তিনি খেলেননি। ওই সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজ খেলেননি মুশফিকুর রহিম, তাওহীদ হৃদয় আর মুস্তাফিজুর রহমানও। এই চারজনই আছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে।
১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৯ মার্চ ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০২৫ আসর।
বাংলাদেশ স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা।