ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলার মসনদ বদল

সিরাজের অগ্রযাত্রার খবর লন্ডন ক্রনিকল ফলাও করে প্রচার করেছে। ১৭৫৭ সালের ৪ জুন হাতে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে তারা লিখেছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি বাংলার নবাব ইংরেজদের সম্পত্তি নষ্ট করে দিয়েছে; যার আকার ৫ কোটি লিব্রা। যুবরাজ তো ঘোষণাই দিয়েছেন, ইংরেজদের সব সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’

১৭৫৬ সালের এপ্রিলে বাংলার মসনদে বসেন সিরাজউদ্দৌলা। এর পর থেকেই মূলত বাংলার নবাব ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বিরোধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। সে সংঘাতের চালচিত্র উঠে এসেছে সমকালীন নথিপত্র, চিঠি ও সংবাদমাধ্যমে। বিশেষ করে ইংরেজি, স্কটিশ ও ফরাসি পত্রিকাগুলো ছিল বেশ সরব।

ইংরেজি পত্রিকার খবরে যাওয়ার আগে পলাশীপূর্ব ঘটনাপ্রবাহে একবার চোখ রাখা যেতে পারে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নবাবের অভিযোগ ছিল মূলত তিনটি। কোনো প্রকার অনুমতির তোয়াক্কা না করে ফোর্ট উইলিয়মে প্রাচীর নির্মাণ, ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ ব্যবসা এবং নবাবের অবাধ্য প্রজাদের বেআইনিভাবে আশ্রয় দেয়া। নবাব বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য ব্রিটিশদের আহ্বান জানান এবং কলকাতায় প্রতিনিধি দল পাঠান। নবাব কোম্পানির কাছে কৃষ্ণদাসকে তার হাতে সমর্পণের দাবি করেন এবং নতুন প্রাচীর ভেঙে ফেলতে ও কলকাতার চারদিকের পরিখা ভরাট করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নবাবের যে বিশেষ দূত দাবিসংবলিত চিঠি নিয়ে কলকাতায় যান, ইংরেজরা তাকে অপমানিত করে। কলকাতার ইংরেজ গভর্নর রজার ড্রেক যে চরম অপমানজনকভাবে নবাবের প্রতিনিধি নারায়ণ সিংহকে বিতাড়িত করে তা সবিস্তার শুনে নবাব অত্যন্ত রাগান্বিত হন। নবাব তাৎক্ষণিক কাশিমবাজার কুঠি অবরোধের আদেশ দেন। কুঠির প্রধান আত্মসমর্পণ করে কিন্তু কলকাতার ইংরেজ গভর্নর অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি প্রদর্শন করেন। ফলে নবাব কলকাতা অভিযান করে তা দখল করে নেন। এ ঘটনা ব্রিটিশ শিবিরে আলোচনা তৈরি করে। বাংলায় যেসব ব্রিটিশ ছিল তারা অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর জন্য মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট জর্জে জরুরি খবর পাঠায়। সেখান থেকে রবার্ট ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের অধীনে একদল ব্রিটিশ সৈন্য বাংলায় আসে। তারা ১৭৫৭ সালের জানুয়ারিতে কলকাতা পুনরুদ্ধার করে এবং নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সঙ্গে আলীনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।

সে সময়ে ইংরেজি পত্রিকাগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ছিল দ্য লন্ডন ক্রনিকল, পাবলিক অ্যাডভারটাইজার, লয়েড’স ইভনিং পোস্ট, রিড’স উইকলি জার্নাল অর ব্রিটিশ গেজেটিয়ার। ঘটনাপ্রবাহ বারবার পত্রিকাগুলোয় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। সিরাজের অগ্রযাত্রার খবর লন্ডন ক্রনিকল ফলাও করে প্রচার করেছে। ১৭৫৭ সালের ৪ জুন হাতে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে তারা লিখেছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি বাংলার নবাব ইংরেজদের সম্পত্তি নষ্ট করে দিয়েছে; যার আকার ৫ কোটি লিব্রা। যুবরাজ তো ঘোষণাই দিয়েছেন, ইংরেজদের সব সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।’

লয়েড’স ইভনিং পোস্ট সংবাদপত্র ছবি: ইনভ্যালুয়েবল

যদিও ঘটনা কয়েক মাস আগের। বস্তুত সে সময়ে প্রকাশিত দূরবর্তী সংবাদগুলো প্রকাশিত হতো দেরিতেই। কারণ তাদের হাতেই পৌঁছতে সময় লাগত। এজন্য একই পত্রিকায় নবাবের পরবর্তী অগ্রযাত্রার খবর দেখা যায় ৭ জুন। সে সময় লেখা হয়েছে, ‘সিরাজউদ্দৌলা ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে জুনে কলকাতার উদ্দেশে অভিযান চালান। নিষ্ঠুরতা চালান সেখানকার কোম্পানির লোকজনদের ওপর। ফরাসি ও ডাচ ব্যবসায়ীদের ভাগ্যও খুব বেশি আলাদা হয়নি। নবাবকে মোটা অংকের অর্থ উপঢৌকন দেয়ার মাধ্যমে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

নবাবের এ অগ্রযাত্রায় তটস্থ ছিল কোম্পানি শিবির। তাদের তৎপরতা নিয়ে ৯ জুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, ‘কাশিমবাজারের কারখানা আত্মসমর্পণ করে। যদিও অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। ....দেশের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে একটা যুদ্ধ কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। তিনদিন ধরে দুর্গে কোনো অস্ত্র নেই। নারীদের পাঠানো হয়েছে দুর্গের সামনে রাখা জাহাজে। গভর্নর ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা জাহাজে করে দূরে সরে গেছেন। দুর্গের ভেতরের সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ধরনের পলায়নের পথ নেই। দুর্গে রয়ে গেছে ২৫০ জন পুরুষ। যখন সব গোলাবরুদ শেষ দিকে, সে সময়েই একটা সন্ধির পতাকা টানানো হয়। এক ডাচ প্রহরীর প্রতারণার কারণে আমরা বাধ্য হই আত্মসমর্পণ করতে। সে রাতেই আমাদের ১৭০ জনকে একটা অন্ধকূপে রাখা হয়, যেখানে মাত্র ৫০ জন থাকতে পারে। ফলে পরদিন সকালে মাত্র ১৬ জন বেঁচে ফিরেছে।’

অন্ধকূপ নিয়ে মুখরোচক আখ্যান সে সময়ের ব্রিটিশ বেশকিছু পত্রিকা ফলাও করে প্রচার করে। এদিকে বাংলার পতনের খবর পৌঁছে যায় মাদ্রাজ ও বোম্বেতে। ৮ জুন পাবলিক অ্যাডভারটাইজারে সংবাদ ছাপা হয়েছে, ‘ফোর্ট সেন্ট জর্জ ও বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নৌবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাডমিরাল ওয়াটসন এবং স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব রয়েছে কর্নেল ক্লাইভের হাতে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই কোম্পানি হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।’

সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নবাবের সঙ্গে সংঘাতে হারানো জাহাজের একটা বিবরণ তুলে ধরে লয়েড’স ইভিনিং পোস্ট পত্রিকা। ১৬ জুন পত্রিকাটি লিখেছে, ‘বাংলা থেকে আসা সংবাদের মাধ্যমে জানা গেল, কয়েকটি জাহাজ তাদের হাতে আটক হয়েছে। জাহাজগুলো হলো প্রিন্স এডওয়ার্ড, সেন্ট জর্জ, নেপচুন, অ্যাডভেঞ্চার, ক্যালকাটা স্লপ।’

কাশিমবাজার ও কলকাতা দখলের পর নবাবের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে লন্ডন ক্রনিকল। ১৮ জুন পত্রিকাটি লিখেছে, ‘দুর্গ দখলের পর নবাব খুবই বিস্মিত হন, সেখানে যে পরিমাণ অর্থ থাকার কথা তা নেই। ড্রেক আগেই তা সরিয়ে ফেলেছিলেন। দুর্গে প্রায় ৪০০-৫০০ ইউরোপীয় ও ৭০০­-৮০০ সশস্ত্র সিপাহি ছিল। সঙ্গে ছিল চার মাসের রসদ।’

একই প্রতিবেদনে আরো লেখা হয়, ‘কলকাতা অধিকার করার তিন-চারদিন পর নবাব ঘোষণা দেন, আর্মেনীয় ও ইংরেজ খ্রিস্টানরা এবং কলকাতার সাধারণ নাগরিকরা শহরটিতে ফিরতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো ক্ষতি করা হবে না। কিন্তু পরশু দিন খবর চাউর হয়েছে, ইংরেজরা পাল্টা আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে নবাব ঘোষণা দিলেন সবাই যেন তিনদিনের মধ্যে জায়গা ছেড়ে চলে যায়। যারা তার আদেশ অগ্রাহ্য করবে, তাদের নাক ও কান কেটে

ফেলারও নির্দেশনা দেয়া হয়।’

রিড’স উইকলি জার্নাল অর ব্রিটিশ গেজেটিয়ারে ১৮ জুন প্রতিবেদনটি অনেকটা বিশ্লেষণধর্মী। সেখানে বাংলার নবাবদের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে আলীবর্দী খানের সঙ্গে ইংরেজদের বোঝাপড়া। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘ফোর্ট উইলিয়াম ও কলকাতার এ বিপর্যয় অনেক বেশি বিস্ময়কর। কারণ পুরনো নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের একটা ভালো বোঝাপড়া ছিল সবসময়। বিভিন্ন সময়ে তিনি ইংরেজদের সম্মান ও আনুকূল্য দেখিয়েছেন।’

একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গুঞ্জন উঠেছে মোগল সম্রাট তার বড় পুত্র ও সেনাপতিকে প্রেরণ করেছেন বাংলায়। সঙ্গে রয়েছে বড় একটা বাহিনী। তারা তরুণ নবাবকে ক্ষমতা থেকে সরাবেন এবং বাংলার মসনদে যুবরাজকে বসাবেন। কথা সত্য হলে নবাবের কলকাতা দখলের পরও শিগগিরই সেটাকে ছেড়ে দিতে হবে।’

পাবলিক অ্যাডভারটাইজার পত্রিকা ২৩ জুলাই লিখেছে, ‘বাংলা থেকে একটা প্যাকেট এসেছে এ খবর নিয়ে যে অ্যাডমিরাল ওয়াটসন নতুন করে ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে নিয়েছেন। ২ ঘণ্টার সংঘাতের বাইরে খুব বেশি হতাহত হয়নি। তারা তাদের সব কামান, বন্দুক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য ফ্যাক্টরিতে খুঁজে পেয়েছেন।’

দ্য লন্ডন ক্রনিকল ৩০ জুলাই একটি চিঠি প্রকাশ করে। মূলত চিঠিটি লেখা হয়েছে ১৭৫৭ সালের ২০ জানুয়ারি; লেখক নবাবের ক্রুদ্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘১৭৫৬ সালের মে মাসের দিকে বাংলার নবাবের এক প্রধান মুর্শিদাবাদ থেকে ছুটে আসে কাশিমবাজারে। সেখানে ছিল আমাদের কারখানা। সেই প্রধান মুর্শিদাবাদ সেখান থেকে চলে আসে কলকাতা। তিনি ইংরেজদের সুরক্ষা প্রার্থনা করেন এবং পান। বিষয়টি নবাবকে ক্রুদ্ধ করে। যদিও তিনি কিছু করেননি। তার দূতকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল অসম্মানজনক পন্থায়। তার রাগ এবার আরো বেড়ে গেল। এর আগে তিনি পূর্ণিয়ার নবাবের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু অবস্থা দেখে তিনি কাশিমবাজার দখল করে নেন। তারপর তিনি রওনা হন কলকাতার দিকে। প্রায় ৩০ হাজার নিয়মিত সৈন্য নিয়ে নবাব কলকাতায় এসে উপনীত হন। আরো বহু সৈন্য তার পেছনে ছিল অভিযানে।’

তবে ইংরেজদের হাতে হারানো শহরের পুনরুদ্ধার চিত্রও উঠে আসতে দেরি হয়নি। লন্ডন ক্রনিকল ৪ আগস্ট একটা চিঠি প্রকাশিত হয়। চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১ ফেব্রুয়ারি ১৭৫৭ সালে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এখানে এসেই হুগলি শহর দখলে নিয়ে ফেলেছি। এখানকার অধিকার আবর্জনাও সরিয়ে ফেলেছি। কলকাতা মুসলমানরা দখলে নিয়েছিল। তারপর তারা ক্রমে হত্যা করে লেফটেন্যান্ট স্কট ও লেফটেন্যান্ট সিম্পসনকে।’ এ সংবাদের ফলো-আপ হিসেবেই লন্ডন ক্রনিকল ১৬ আগস্ট ১৭৫৭ সালে লিখেছে, ‘খবর হাতে পৌঁছেছে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের সঙ্গে সমঝোতায় গেছে। যেহেতু উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতিই অনেক বেশি, ফলে সমঝোতা দুই পক্ষের জন্য ইতিবাচক। এর পর থেকে ইংরেজ কারখানায় বেশকিছু মালপত্র আনা-নেয়া করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরে তিনটা জাহাজ সেখান থেকে ইউরোপে আসতে পারবে।’

২১ আগস্ট লয়েড ইভনিং পোস্টে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একটা চিঠিকে ভিত্তি ধরে। কলকাতা থেকে সে চিঠিটা লেখা হয়েছে ৩০ মার্চ। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘নবাব এক বিশাল বাহিনী নিয়ে আমাদের থেকে এক মাইল দূরে তাঁবু গেড়েছিল। আমাদের রসদের সব সম্ভাবনা বন্ধ করতে চেয়েছিল। এদিকে দেশীয় সৈন্যরাও আমাদের ত্যাগ করেছে। তার পরও নবাব যেদিন যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তার আগের দিনই আমরা তাঁবুতে হামলা করেছি। তখন ভোর ৬টা। কুয়াশায় কিছুই প্রায় দেখা যায় না। আমাদের সৈন্যরা হাতে আগুন রেখেছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা চলেছে যুদ্ধ। তাদের ১ হাজার ৩০০ যোদ্ধা, ৬০০ ঘোড়া, পাঁচটা হাতি ও কিছু উট হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’

নবাবের কাশিমবাজার অধিকার নিয়ে লন্ডন ক্রনিকল একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করে ১৫ অক্টোবর। প্রকাশিত সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যখন আমরা মাদ্রাজ উপস্থিত হলাম, দ্রুত তৈরি হচ্ছিলাম লন্ডন ফেরার জন্য। সে হিসেবেই তৈরি করা হচ্ছিল কার্গো। এ সময়ে বাংলা থেকে খবর এল ইংরেজদের অধিকৃত একটা অঞ্চল নবাব দখল করে নিয়েছে। খবর শোনামাত্রই আমরা আবার মালপত্র নামিয়ে ফেললাম। ৩২০ জন সৈন্য নিয়ে রওনা হলাম বাংলার দিকে। যখন আমরা নদী পর্যন্ত পৌঁছেছি, তখন শুনলাম কলকাতাও দখলে নিয়ে ফেলেছে নবাব। এ খবর শুনে আমরা আরো আগাতে সাহস পেলাম না। অবশ্য দ্রুতই আমরা মনোবল ফিরে পেয়েছিলাম।’

ইংরেজদের অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে একটা দীর্ঘ চিঠিকে ভিত্তি ধরে লেখা প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ১৭৫৭ সালের ২৯ অক্টোবর রিড’স উইকলি জার্নালে। এপ্রিলে পাঠানো সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘দুটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে বাংলায়। নবাব ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে এগিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত কলকাতার অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা আট হাজার ইউরোপীয় সৈন্য, সঙ্গে ৫০০ শতাধিক নৌসেনা পাঠাই।...তাদের অশ্বারোহী সৈন্যরা হাতে তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করেছে। তাদের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, তবে ছিল যথেষ্ট সাহসী।... দ্বিতীয় বড় ঘটনা হলো ফ্রান্স অধিকৃত চন্দননগরকে ঘিরে। তাদের সঙ্গে আমাদের টানা ৪ ঘণ্টার সংঘাতের পর তারা সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়।’

তার পরের ঘটনা খুব বেশি অজানা নয়। তবে ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনীর অগ্রগতি, ইংরেজ ও উমিচাঁদদের ষড়যন্ত্র, পলাশীর আমবাগান ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ। ১৭৫৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য লন্ডন ক্রনিকল’ খুব সংক্ষিপ্ত একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দাবি করা হয়, ‘কর্নেল ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ১ লাখ ৮০ হাজার স্টারলিং পাঠিয়েছেন, আমরা শুনতে পেয়েছি, তিনি বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হয়েছেন।’

ইংরেজি পত্রিকাগুলো ছিল মূলত ইংরেজপক্ষের গতিবিধি নিয়ে। বাংলা ও নবাবপক্ষের ভাষ্য সেখানে উঠে আসেনি। তার পরও বাংলার ভাগ্য পরিবর্তনকারী সময়কে পাঠ করতে প্রাথমিক উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখে সেসব প্রতিবেদন।

আহমেদ দীন রুমি: সহসম্পাদক, বণিক বার্তা

আরও