গবেষণা প্রতিবেদন

দুই বছরের মধ্যে চিপের চাহিদা ২৯ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস

সেমিকন্ডাক্টর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর অর্ধেকের বেশি আগামী দুই বছরে তাদের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পর্যাপ্ততা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

সেমিকন্ডাক্টর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর অর্ধেকের বেশি আগামী দুই বছরে তাদের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পর্যাপ্ততা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপজেমিনি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুসারে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ চিপের চাহিদা ২৯ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোর প্রত্যাশার দ্বিগুণ। খবর টেক মনিটর।

২০২৪ সালের নভেম্বরে ক্যাপজেমিনি রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিচালিত একটি বৈশ্বিক জরিপের ভিত্তিতে এ ফলাফল পাওয়া গেছে। জরিপটিতে ১২টি দেশের ২৫০ জন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নির্বাহী ও সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে এমন শিল্পের ৮০০ নির্বাহীদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘দ্য সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি ইন দ্য এআই এরা: ইনোভেটিং ফর টুমরোস ডিমান্ডস’ শীর্ষক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, চিপ ব্যবহারকারী ৮১ শতাংশ কোম্পানি আগামী বছরের মধ্যে ২১ শতাংশ চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছে। তবে তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও কম মনে করে যে বর্তমান সরবরাহ তাদের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।

জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (জেন এআই), ফাইভজি, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ও এজ কম্পিউটিংয়ের মতো প্রযুক্তিগুলো উন্নত সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে। প্রায় ৬০ শতাংশ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি বলছে, এসব প্রযুক্তি তাদের মূল ব্যবসায়িক লক্ষ্যকে প্রভাবিত করছে। নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট (এনপিইউ) ও শক্তিশালী গ্র্যাফিকস প্রসেসিং ইউনিটের (জিপিইউ) মতো বিশেষায়িত চিপগুলোর চাহিদা বেশি। চিপ ব্যবহারকারী ৫৪ শতাংশ কোম্পানি বলছে, তাদের কম্পিউটিং চাহিদা পূরণের জন্য জিপিইউর উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যাপজেমিনি গ্লোবাল হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিডার ব্রেট বনথ্রন বলেন, ‘জেনারেটিভ এআই চিপের চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে কাস্টমাইজ ও সফটওয়্যার-কেন্দ্রিক পণ্যের বাড়তি চাহিদার সম্মুখীন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিকে খাতসংশ্লিষ্টদের উৎপাদন বাড়ানো ও ‘চিপ-টু-ইন্ডাস্ট্রি’ পদ্ধতি গ্রহণ করার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। এর মাধ্যমে হার্ডওয়্যারেরও আগে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট গুরুত্ব পাবে। নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর নির্দিষ্ট চাহিদা মেটাতে এআই ও জেনএআই ব্যবহার করে উন্নত উৎপাদন ও নকশা কৌশলে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। খাতটির জন্য পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত করা ও মেধা সম্পদ (আইপি) রক্ষার জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যাপজেমিনির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিপ ব্যবহারকারী এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানি নিজস্ব চিপ তৈরির কথা বিবেচনা করছে বা এরই মধ্যে শুরু করেছে। এ প্রচেষ্টা আরো কাস্টমাইজড চিপ তৈরি, বাইরের সরবরাহকারীদের ওপর কম নির্ভরশীল হওয়া ও সরবরাহ চেইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করে। এদিকে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো চিপ তৈরির প্রযুক্তি উন্নত করছে, যার মধ্যে রয়েছে এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট (ইইউভি) লিথোগ্র্যাফি, ছোট চিপ ডিজাইন ও থ্রিডি প্যাকেজিং পদ্ধতি। এ চাহিদা পূরণের জন্য আগামী দুই বছর গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট ১০ শতাংশ বাড়বে বলে খাতসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ সংকট আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ সমস্যার সমাধানে খাতটি আগামী দুই বছরে দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। একই সময় নিকটবর্তী দেশগুলোয় উৎপাদন ৪ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪ শতাংশ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যেখানে ইউরোপে কার্যক্রম বাড়বে ৫৯ শতাংশ কোম্পানিতে।

আরও