বইবিষয়ক পত্রিকা ‘এবং বই’-এর আয়োজনে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন ও সাংবাদিক, গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং বই সম্পাদক ও প্রকাশক ফয়সাল আহমেদ।
এ প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত ছিল বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও গবেষক আবদুর রউফ চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ: চির-নূতনেরে দিল ডাক’, ও ‘নজরুল: সৃজনের অন্দরমহল’ নামের দুটো বই।
রিভিউয়ে অংশ নেয়া সেরা দশজন বিজয়ীর হাতে প্রায় ৬০ হাজার টাকার পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এর মধ্যে ছিল প্রথম পুরস্কার দুটি ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার দুটি ৫ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার দুটি ৩ হাজার টাকা করে। এছাড়াও নির্বাচিত সেরা ৪ জনকে ২ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। নগদ অর্থমূল্যের সঙ্গে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে সমমূল্যের বই ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়।
অয়োজনের বিজয়ীরা হলেন- ‘রবীন্দ্রনাথ: চির-নূতনেরে দিল ডাক’ গ্রন্থে সুমন মজুমদার (প্রথম), পলাশ মজুমদার (দ্বিতীয়), কবীর আলমগীর (তৃতীয়), ইলিয়াস বাবর (বিশেষ) ও সিদ্দিকী হারুন (বিশেষ)। ‘নজরুল: সৃজনের অন্দরমহল’ গ্রন্থে নার্গিস সুলতানা (প্রথম), জাকিয়া সুলতানা (দ্বিতীয়), শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী (তৃতীয়), রাকিবুল রকি (বিশেষ) ও জোবায়ের মিলন (বিশেষ)।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘এবং বই’ বইয়ের সমালোচনা প্রকাশ করছে এটা ভালো উদ্যোগ। যারা সমালোচনা লেখেন তাদের মনে রাখতে হবে এ ভাষায় বিদ্যাসাগর লিখেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র লিখেছেন, বেগম রোকেয়া, এস ওয়াজেদ আলী লিখেছেন। তাদেরই উত্তরাধিকারী আমরা। এ অবস্থা থেকে আমরা নিচে নেমে গেছি। আমাদেরকে ওপরে উঠতে হবে। যারা সমালোচনা লিখবেন তারা তাদের নিজের মত অনুযায়ীই লিখবেন, কিন্তু অন্যদের মত বিবেচনায় রাখবেন।
লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, এখন যদি একটি সার্ভে হয় যে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বই পড়েছি কিনা? প্রতি একশ জনে একজন পাওয়া যাবে। যদি বলি টলস্টয় পড়েছি কিনা? হয়তো এক হাজার জনে একজন পাওয়া যাবে। তরুণদের কথা বাদই দিলাম, আমি বয়স্কদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি এ সময়ে প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, ইট-বালু-সিমেন্ট-কাঠ। এখানে বই, সিনেমা, গান, ছবির প্রদর্শনী কী হচ্ছে এসব নিয়ে কনসার্ন নেই।
কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন বলেন, যখন আমরা ক্রমশ বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, ছোট্ট ছোট্ট লেখা পড়ছি, রিলস দেখে সময় কাটাচ্ছি। যেখানে চিন্তার জগৎটাই ছোট হয়ে আসছে। এমন একটা সময়ে এ আয়োজন করে ‘এবং বই’ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এবং বইকে ধন্যবাদ জানাই।
সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেন, প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত দুটো বই-ই গবেষণামূলক। যার একটি কাজী নজরুল ও অপরটি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আমরা সাধারণত দেখি একজন লেখক যেকোনো একটি বিষয়কে নিয়েই গবেষণা করেন, কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম লেখক আবদুর রউফ চৌধুরী। যিনি নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দুটো বড়ো ধরনের গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন। প্রচলিত ধারার প্রতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসে লেখক একটি নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ধারায় বই দুটি লিখেছেন। ‘এবং বই’ বুক রিভিউর জন্য এ বই দুটিকে নির্বাচন করে একটি মাইলফলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এবং বই সম্পাদক ও প্রকাশক ফয়সাল আহমেদ বলেন, প্রথমবারের মতো ‘এবং বই’ এ আয়োজন করেছে, ভুল-ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি একটি কঠিন কাজ ছিল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও উপস্থিত সুধীজন সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান লেখক আবদুর রউফ চৌধুরীর পুত্র ড. মুকিদ চৌধুরীকে এ আয়োজনে ‘এবং বই’ এর পাশে থাকার জন্য।
পুরস্কার জয়ী নার্গিস সুলতানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি এবং আমার মেয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। মেয়ের উৎসাহেই মুলত আমার বুক রিভিউ লেখা। সুন্দর আয়োজনের জন্য এবং বইকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কথাশিল্পী মনি হায়দার, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সত্যজিৎ রায় মজুমদার, প্রকাশক হাসান তারেক, ঔপন্যাসিক মাসউদ আহমাদ, শামস সাইদ, ভ্রমণ লেখক গাজী মনসুর আজিজ, কবি মাজহার সরকার ও বুক রিভিউ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া পুরস্কারপ্রাপ্তরা উপস্থিত ছিলেন।