সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতে পারলেই মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা সম্ভব—এমনটি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে এক কর্মশালায়। আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেট কৃষি খামার সড়কে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কনফারেন্স হলে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ এখনো নিরাপদ খাদ্যের অভাবে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষের তৈরি দূষণ ও রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
‘স্ট্রেংদেনিং স্মলহোল্ডার ফার্মস অ্যান্ড রুরাল এন্টারপ্রাইজেস টু বেটার কোপ উইথ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন দ্য ভালনারেবল হাওর রিজিয়ন অব বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রকল্পের শেষ পর্যায়ের মূল্যায়নের তথ্য তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় কর্মশালাটি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি), জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে এবং জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের (বিএমজেড) অর্থায়নে।
কর্মশালায় জানানো হয়, ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তায় টেকসই ও জলবায়ুবান্ধব কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করেছে। আর এই মাধ্যমে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সমাপ্তি পরবর্তী মূল্যায়নের তথ্য পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন প্রকল্প প্রধান মামুনুর রশিদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. সাইফুল আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক ড. মো. বখতিয়ার হোসেন এবং ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর কেলভিন শিংলস। অনুষ্ঠানের শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন এফআইভিডিবির নির্বাহী পরিচালক বজলে মুস্তাফা রাজী।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও বিষম্ভরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১০৩টি গ্রামে। এতে ২০ হাজার ৫৩৮টি প্রান্তিক কৃষক পরিবার অংশ নিয়েছে। তারা পরিবেশবান্ধব কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনের পাশাপাশি স্থানীয় খাদ্যব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বাজারে প্রবেশাধিকার, জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হয়েছে।
মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পে অংশ নেয়া ৭৮.৩ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক তাদের কৃষিকাজে বৈচিত্র আনতে পেরেছেন। ৮৮.১ শতাংশ পরিবার বন্যার সময়ও ৫ বা তদূর্ধ্ব খাদ্যতালিকা স্কোর ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ৭০.৪৫ শতাংশ কৃষক আয় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পেরেছেন। কৃষক সংগঠন ও মাইক্রো উদ্যোগগুলোর সিদ্ধান্তগ্রহণে ৯৪.৫ শতাংশ নারী সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। আবহাওয়া তথ্য ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্ষতি কমানো ও কীট ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটিয়েছেন কৃষকরা।