যারা একটু ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের কাছে জনপ্রিয় একটি এলাকা সিলেটের জাফলং। পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানির নদী, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে গড়ে ওঠা খাসিয়া জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বসতি ও সংস্কৃতি, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সঙ্গেমিশে থাকা সাদা মেঘ- সব মিলে প্রকৃতির অপূর্ব এক লীলাভুমি প্রকৃতি কন্যা খ্যাত জাফলং।
একেক ঋতুতে জাফলং এর রূপ ফুটে ওঠ একেকভাবে। তাই সারাবছরই পর্যটকদের আগ্রহ থাকে জাফলংকে ঘিরে। তবে বৃষ্টির মৌসুমে প্রকৃতি কন্যা নিজের সকল সৌন্দর্য যেন উজাড় করে দেয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে জাফলং এর অবস্থান। এই দর্শনীয় জায়গাটির অবস্থান সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়টি মেঘালয় সীমান্তে আলাদা করেছে বাংলাদেশ ও ভারতকে। সীমান্তবর্তী জায়গাটি পড়েছে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর অববাহিকায়।ভারতের ডাউকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
পিয়াইন নদীর হাঁটু সমান পানিতে দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের চূড়া খোঁজার অনুভূতির সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। অদূরে জলপ্রপাত ঝুলন্ত সেতুর নিচ দিয়ে এসে দু’পা স্পর্শ করে। ব্রিটিশ শাসনামলে গড়া এই সেতু সাক্ষী হয়ে আছে ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে সৃষ্টি হওয়া ডাউকি ফল্টের। আবার নৌকা করে ডাউকি নদীপথে কিছুক্ষণ ভেসে গেলেই দূরে হাতছানি দিয়ে ডাকবে সংগ্রামপুঞ্জি বা মায়াবী ঝর্ণা। আর পিয়াইন নদী পেরোলেই ওপারে খাসিয়াদের গ্রাম। পাহাড়ের কোলে তাদের অদ্ভুত বাড়ি নির্মাণশৈলী আর পানের বরজ হাজারও পর্যটকের বিস্ময়ের খোরাক যোগায়। অতঃপর সাক্ষাত মন্দিরজুম অবলীলায় গল্প বলতে শুরু করে খাসিদের ঐতিহাসিক মালনিয়াং রাজ্যের।পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে সারা দেশের মতো জাফলংও আয়োজন করে বৈশাখী মেলার।
কিংবদন্তি আছে, সোনাটিলা গ্রামে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়। সেই বিস্ময়কর ঘটনা চাক্ষুষ করতে এখনো কৌতূহলী চোখে ঘুরে বেড়ান ভ্রমণপিপাসুরা।
ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, ফকিরাপুল, অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের যে কোনোটি থেকে বাসে করে সিলেট যাওয়া যাবে। এগুলোতে এসি, নন-এসি এবং কোম্পানিভেদে জনপ্রতি ভাড়া পড়ে ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
এছাড়া কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী ট্রেনে উঠে পড়া যায়। টিকেট মূল্য নিতে পারে মাথাপিছু সর্বনিম্ন ৩২০ থেকে সর্বোচ্চ ১,০৯৯ টাকা।
সবচেয়ে দ্রুত সময়ে সিলেট পৌঁছানোর একমাত্র উপায় বিমানে যাওয়া। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই যাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণী অনুযায়ী খরচ পড়তে পারে ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে।
সিলেটে পৌঁছানোর পর সিলেটের কদমতলী এবং সোবহানীঘাট থেকে জাফলংয়ের বাসগুলো ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বাস বাদে জাফলং যাওয়ার সিএনজি ও লেগুনা সার্ভিস রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে মাইক্রোবাসও ভিড় করে থাকে বন্দরবাজারের শিশুপার্কের সামনে। এছাড়াও সিলেটের প্রায় সব জায়গাতেই রিজার্ভ করার জন্য গাড়ি পাওয়া যায়।
যাওয়া-আসাসহ সারাদিনের জন্যে সিএনজি ভাড়া নিতে পারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। খরচটা লেগুনার ক্ষেত্রে হয়ে যাবে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। মাইক্রোবাস রিজার্ভ করার জন্য তিন হাজার থেকে থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগতে পারে।