ঘুরে আসুন দেবতাখুম

নতুন নিয়ম অনুযায়ী পর্যটকরা সরাসরি লিরাগাঁও বাজারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস কেন্দ্রে নিজেদের পরিচয়পত্র অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে সরাসরি দেবতাখুম ভ্রমণ করতে পারবেন।

ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের পছন্দের জায়গা দেবতাখুম। বান্দরবন জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এই দেবতাখুমে যাওয়ায় প্রায়ই দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে সরকার। দেবতাখুম ভ্রমণে আপাতত নেই কোনো ধরনের বাধা। তাই এই সুযোগে চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন দেবতাখুম।

প্রকৃতির লীলাভূমি বান্দরবানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অজস্র খুম। মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে জলপ্রপাত। ঝর্ণার পানি শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে গেলেও খুমের পানি শুকায় না। বান্দরবানের এ সমস্ত খুমের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বড় খুম হলো দেবতাখুম। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ ফিট। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের তীর্থস্থান এটি। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। খুমের গভীরতা এখানে ৫০-৭০ ফিট।

যা দেখবেন সেখানে

দেবতাখুমে যাওয়ার আগেই পড়বে ছোট্ট এক খুম। যার নাম ‘পং সু আং খুম’। এ খুমে সাতার কেটে বা এর সঙ্গে লাগোয়া গাছের শিকড় ধরে ঝুলে ঝুলে যেতে হয় দেবতাখুমে।

তবে এর পথ যেমন সুন্দর তেমনই ভয়ংকর। বর্ষায় খুমের পানি আরো বেড়ে যায়। তখন সেখানে যাওয়া বেশ কষ্টকর। পিচ্ছিল পাথুরে পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। ভেলা ছাড়া দেবতাখুমে যাওয়ার উপায় নেই। ভেলা নিয়ে যতো এগিয়ে যাবেন ততোই স্থানটি সরু হবে! এমন জায়গা চোখে পড়বে যেখানে ভেলা দিয়ে পাড় হওয়ার সময় সূর্যের আলোও পড়বে না।

জুন থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেবতাখুমে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বৃষ্টির সময় খুম একদম পানি দিয়ে ভরা থাকে, তাই অনেক দূর পর্যন্ত ভেলা নিয়ে যেতে পারবেন!

যেভাবে যাবেন দেবতাখুমে

দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি বা নন এসি সব ধরনের বাসই বান্দরবান যায়। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। ভাড়া ৫৮০-৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলীসহ অনেকগুলো ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০-১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে সরাসরি দেবতাখুম রোয়াংছড়ি যাওয়ার জন্য সিএনজি, জিপ গাড়ি ও চাঁদের গাড়ি পেয়ে যাবেন। চাঁদের গাড়ি বা জিপ গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত। একটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৩ জন যেতে পারবেন।

এছাড়া বান্দরবান বাস টার্মিনাল থেকে বাসে ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে রোয়াংছড়ি তারপর সিএনজিতে ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে কচ্ছপতলী যেতে পারবেন। বান্দরবান বাস টার্মিনাল থেকে রোয়াংছড়ির দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলীর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার।

তবে দেবতাখুম যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন গাইড নিতে হবে। রোয়াংছড়ি বা কচ্ছপতলী থেকে আপনি একজন গাইড নিতে পারবেন। সারাদিনের জন্য গাইড ফি ১,০০০ টাকা। ১ জন গাইড ১০ জন পর্যটক টিমের গাইড করতে পারবেন। ১০ জনের বেশি হলে ২ জন গাইড নিতে হবে।

জেনে রাখা ভালো

দেবতাখুমের রাস্তায় পদে পদে বিপদ। বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রচণ্ড পিচ্ছিল হয়ে যায় এখানকার পাহাড়ি রাস্তা। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা থাকা জরুরি।

এছাড়া দেবতাখুম ভ্রমণের অনুমতির বিষয়টিতেও সম্প্রতি কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের নিয়মে দেবতাখুম ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের রোয়াংছড়ি থানায় গিয়ে পরিচয়পত্র দেখানোসহ রেজিস্ট্রেশন করা লাগত। এবার নতুন নিয়ম করা হয়েছে। এ নিয়ম অনুযায়ী পর্যটকরা সরাসরি লিরাগাঁও বাজারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস কেন্দ্রে নিজেদের পরিচয়পত্র অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে সরাসরি দেবতাখুম ভ্রমণ করতে পারবেন।

আরও