ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লেবাননের হাজার হাজার বাসিন্দার ঘরবাড়ি। ইসরায়েলি বিমান হামলায় দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের অনেক অঞ্চলসহ বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠের অবকাঠামো প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্থানীয়রা এখনো নিজ আবাসস্থলে ফিরতে পারছে না। তাদের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ নিয়ে বাড়ছে তড়িঘড়ি। ক্ষতিপূরণ দেয়ার কাজও চলছে বেশ ধীরগতিতে। এমনকি চুক্তির সব শর্ত পূরণ হবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। খবর এপি।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে নভেম্বরের শেষে। এ চুক্তির আওতায় লেবাননের দক্ষিণে থাকা ইসরায়েলি বাহিনী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা। তবে এটি কার্যকর হওয়া নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের খরচ কারা বহন করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
লেবাননের অর্থনৈতিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থায় রয়েছে। তাই বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে দেশটির সরকারি সহায়তা খুবই কম হতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো গাজা ও পাশের দেশ সিরিয়ার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যস্ত।
২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক মাসব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে সময় হিজবুল্লাহ ইরানের সহায়তায় ২৮০ কোটি ডলার মূল্যের পুনর্নির্মাণের বেশির ভাগ খরচ নিজেই বহন করেছিল। সংগঠনটি জানিয়েছে, এবারো তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে কিছু ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু করেছে।
লেবাননবাসীরা বলছেন, তারা হিজবুল্লাহর প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে এরই মধ্যে তারা যে অর্থ পেয়েছেন, তা তাদের বাড়ির ক্ষতির তুলনায় অনেক কম।
লেবাননের দক্ষিণের মারজায়উন গ্রামের মানাল (৫৩) নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে জুলাইয়ে। পুরো পরিবার প্রায় এক বছর ধরে বাস্তুচ্যুত। আমরা এখনো কোনো আর্থিক সাহায্য পাইনি।’
হিজবুল্লাহর নির্মাণ শাখা জিহাদ আল-বিনার পরিচালক হোসেইন খাইরেদ্দিন বলেন, ‘আমরা লেবাননের ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেছি। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। প্রতিটি বাড়ির নকশা প্রস্তুত হচ্ছে।’ যদিও তিনি পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাননি।
বিশ্বব্যাংকের নভেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধের ফলে লেবাননে ৮৫০ কোটি ডলারের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তবে লেবাননের উপপ্রধানমন্ত্রী সাদি চামি জানান, এ হিসাবে যুদ্ধের শেষ মাসের ক্ষতির কথা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যানুযায়ী, লেবাননের ৯৯ হাজার ২০৯টি আবাসিক ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ১৮ শতাংশ ঘরবাড়ি।