যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস ও আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩০ হাজার একর জমি ও ১০ হাজারের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল। প্রতি বছর প্রায়ই দাবানলের ঘটনা ঘটছে। এজন্য জলবায়ু বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন এসব দাবানলকে আরো খারাপ করে তুলছে। খবর আল জাজিরা ও বিবিসি।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এলাকায় ছড়ানোর হুমকির মধ্যেই দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। আগুন লাগা পাহাড়গুলোয় হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে। অগ্নিপ্রতিরোধক দিয়ে পালিসেইডসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে আগুন এরই মধ্যে আরো প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ওদিকে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোয় পানি না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে ও কর্মকর্তারা চাপের মুখে পড়েছেন। রাতে বাতাস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আগুনও বেড়ে যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন কি ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের কারণ হতে সহায়তা করেছিল—এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময়। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, পৃথিবী রেকর্ড মাত্রায় উষ্ণ হয়ে উঠছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) শুক্রবার নিশ্চিত করেছে, ২০২৪ সাল ছিল প্রথম পূর্ণ বছর যখন বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। জলবায়ু সংকটের কারণে এমন তাপমাত্রা সৃষ্টি করছে, যা আধুনিক মানুষ আগে কখনো অনুভব করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দাবানল আরো ঘন ঘন ঘটছে ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এসব দাবানলের কবলে বৃহত্তর অঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে।
অগ্নি ইতিহাসবিদ স্টিফেন পাইন বলেন, ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের সময়ের হেরফের দেখা দিয়েছে। উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়েছে। এসব বিষয়ের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল এতটা শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে।’
মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের পালিসেডস এলাকায় শুরু হওয়া দাবানলের কারণ এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। পাইন বলেন, ‘এ আগুন মানবসৃষ্ট, যা অসতর্কতা বা বিদ্বেষের মতো সরাসরি ক্রিয়াকলাপের কারণে বা পরোক্ষভাবে যেমন ত্রুটিযুক্ত বিদ্যুতের লাইনের মাধ্যমে হতে পারে। এ মুহূর্তে সঠিক কারণ অস্পষ্ট।’