ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানালেও কৌশলগত অবস্থানে আছে রাশিয়া। সিরিয়া ও ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় দেশটি। একদিকে তারা ইরানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া করে, অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখে। ফলে এই দ্বৈত সম্পর্ক রাশিয়াকে জটিল কূটনৈতিক চাপে ফেলেছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাশিয়া আশা করে, এ যুদ্ধ যেন একেবারে বৃহৎ আকার না নেয়। কারণ এতে সিরিয়া ও ককেশাস অঞ্চলেও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে রাশিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোটে মনে করেন, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মস্কো সরাসরি সামরিক সহায়তার পথে না গিয়ে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে।
তবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে চীনের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরণের হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
এদিকে চীন একাধিকবার স্পষ্ট করেছে, তারা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার উৎস বলে মনে করে না। বরং তাদের মতে, এই সংঘাত গাজা উপত্যকার চলমান যুদ্ধেরই সম্প্রসারণ। যার প্রভাব গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। আর তাই জাতিসংঘের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের শক্তি প্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
ওয়াং ই বলেন, ‘ইরানি পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক পথ এখনো শেষ হয়নি। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এখনো খোলা রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চীন এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।’
ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন। ইরানের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পক্ষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে সদস্যরাষ্ট্র চীন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান।
তবে সদস্য রাষ্ট্র হয়েও এ বিবৃতি থেকে কৌশলগত কারণে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে ভারত। ইরান -ইসরায়েল ইস্যুতে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি দেশটি।