কর্মসংস্থান সৃষ্টিসংক্রান্ত প্রতিবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশকে সামনে রেখে নিম্নমুখী যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। আগস্টের শুরুতে বড় আকারের দরপতনের পর সেপ্টেম্বরের শুরুতেও দেশটির শেয়ারবাজারে একই ঘটনা ঘটেছে। খবর এপি।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক মঙ্গলবার ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে গেছে। এর আগে টানা তিন সপ্তাহ সূচকটি বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক গত শুক্রবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। মঙ্গলবার তা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৬২৬ পয়েন্ট হারিয়েছে। এদিকে এনভিডিয়াসহ অন্য বড় টেক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বড় আকারের পতনের কারণে নাসডাক কম্পোজিটও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে।
এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উচ্চ সুদহারের কারণে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাত আবার সংকুচিত হয়েছে। এতে বন্ড মার্কেটেও ট্রেজারি ইল্ড (মুনাফা) কমে গেছে। উৎপাদন খাত দুই বছর ধরে সংকোচনের মধ্যে ছিল। তবে আগস্টে অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি সংকুচিত হয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস সার্ভে কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মুদ্রানীতি ও নির্বাচনী অনিশ্চয়তার কারণে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে আগ্রহ কমে গেছে এবং চাহিদা স্থবির হয়ে পড়েছে।’
এদিকে বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ কমে গেছে। প্রতি ব্যারেল বেঞ্চমার্ক মার্কিন জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলারের আশপাশে ফিরে এসেছে। এর আগে এপ্রিলে তা ৮৫ ডলারে পৌঁছেছিল। এ অবস্থায় জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো শেয়ার সবচেয়ে বেশি পতনের মুখে পড়েছে। এক্সনমবিলের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ১ এবং কনোকোফিলিপসের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত মাসের শুরুতে অর্থনীতির ধীরগতি ও মন্দার আশঙ্কায় শেয়ারবাজারে বড় আকারের পতন দেখা গিয়েছিল। সে সময় এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সাময়িকভাবে জুলাইয়ের রেকর্ড থেকে প্রায় ১০ শতাংশ নিচে নেমে যায়। পরে ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার কমানোর সম্ভাবনায় আবারো শেয়ারের দাম বাড়ে।
এর আগে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা ফেড দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করেছিল। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় চলতি মাসের শেষদিকে সুদহার কমানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে মার্কিন অর্থনীতির সূচকগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। এতে দেশটির অর্থনীতির বর্তমান চিত্র উঠে আসবে।
অনেক ব্যবসায়ী আশা করছেন, ফেড এ বছর সুদহারে ১ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেবে। তবে গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ ডেভিড মেরিকলের মতে, কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ফেডের আসন্ন সুদহার কর্তনের ওপর প্রভাব পড়বে। ফেডের বর্তমান সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে।
সুদহার কর্তন সাধারণভাবে বিনিয়োগের অনুকূল। তবে মন্দার সময়ে অর্থনৈতিক স্থবিরতা করপোরেট মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা সুদহারের কমানোর ইতিবাচক প্রভাবকে নষ্ট করে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১১৯ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫২৮ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডাউ সূচক ৬২৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৪০ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে নেমেছে এবং নাসডাক কম্পোজিট ৫৭৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ১৩৬ দশমিক ৩০ পয়েন্টে নেমে গেছে।
এদিকে বন্ড মার্কেটে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা শুক্রবার রাতে ছিল ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত এপ্রিলের শেষের দিকে এ ধরনের বন্ডের ইল্ড ছিল ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
মার্কিন শেয়ারবাজারের বাইরেও ইউরোপ ও এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে শেয়ারবাজার সূচক ছিল নিম্নমুখী।
একই সময়ে চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অর্থনীতির মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে। রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী নিউ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিসহ চীনা কোম্পানিগুলোর দুর্বল আয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর উদ্বেগ আরো বেড়েছে।