টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু অঞ্চল। নগরীর সড়কগুলোয়ও পানি জমতে দেখা গেছে।

টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু অঞ্চল। নগরীর সড়কগুলোয়ও পানি জমতে দেখা গেছে। কক্সবাজারে প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক এলাকা। নয়টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বান্দরবানজুড়ে টানা তিনদিন বৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক তলিয়ে থাকায় গতকাল দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে আলীকদম উপজেলা। টানা বর্ষণে এসব অঞ্চলে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস জানায়, বুধবার বিকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল ভোর থেকে নগরীতে জলাবদ্ধতা শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি নামতে শুরু করে। নগরীতে বিকালেও বেশ কয়েক জায়গায় হাঁটুসমান পানি দেখা গেছে।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৬টা-৯টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চাঁদগাঁও বাদুরতলা, চকবাজার, আকবরশাহ, ২ নম্বর গেট, রহমান নগর, চকবাজার, ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে গেছে।

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আলী আকবর খান জানান, আগামী পাঁচদিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল। এর প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে টানা বর্ষণে নগরীতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেড়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরীর ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোয়। পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে। টানা বৃষ্টিতে গতকাল সকাল থেকে নগরীর লালখান বাজার টাংকির পাহাড়ের পাদদেশ ছেড়ে কিছু বাসিন্দা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসকরীদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে দুই শতাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজারে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নয়টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে কক্সবাজার অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে। আগামী তিনদিনও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‌টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাকপাড়া, নাজিরারটেকসহ ১০টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত রয়েছে।’

কক্সবাজার আবহাওয়ার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, দুদিনে কক্সবাজারে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী তিনদিন ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বান্দরবান তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মাত্রা কখনো হালকা, মাঝারি এবং ভারি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে আলীকদম উপজেলা। বৃষ্টিতে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বুধবার ইউনিয়নের অন্তত ১০-১২টি পাড়া, রাস্তা ও দোকান প্লাবিত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের ক্ষতি এড়িয়ে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ঘুমধুম ইউনিয়নবাসীর সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ১০০-১২০ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে লামা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত লামা সদরের চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪৯ পরিবারের ২২৮ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদের পানি বাড়তে শুরু হওয়ায় থানচি উপজেলার আইলমারা খালের সেতু তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো। তিনি বলেন, ‘সেতুটি তলিয়ে যাওয়ায় বিপরীত দিকের লোকালয়ের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’

বন্যায় লামা-আলীকদম সড়কে তিনটি স্থানে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদম উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নদী ও খালে পানি বাড়লেও উল্লেখযোগ্য লোকালয় প্লাবিত হয়নি। তবে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গিয়ে নদী-খাল তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় পাঁচ-ছয়টি পাড়ায় মানুষ নৌকায় যাতায়াত করছে।’

আরও