বৈশ্বিক ক্লাউড যুদ্ধে রূপ নিতে পারে চিপ নিয়ে চলমান বিরোধ

উন্নত দেশগুলো এআই প্রযুক্তি পরিচালনা করতে ডাটা সেন্টার তৈরি, নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষিত করার প্রতিযোগিতা করছে।

উন্নত দেশগুলো এআই প্রযুক্তি পরিচালনা করতে ডাটা সেন্টার তৈরি, নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষিত করার প্রতিযোগিতা করছে। বিশেষ করে চিপ নির্মাণ নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধ এখন তুঙ্গে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বে চিপ নিয়ে যে বিরোধ চলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)  প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সেটি ক্লাউড যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, পরস্পর বৈরী এসব দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলো উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও অ্যাকসেস করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। এসব দেশ ও সংস্থা ক্লাউড পরিষেবা ও ডাটা সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যে আরো আক্রমণাত্মকভাবে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে চিপ তৈরির উপকরণের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপান। গত বছরের শুরুর দিকে দেশ তিনটি চীনের কাছে এসব উপকরণ রফতানি সীমিত করতে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে হুয়াওয়ে চীনের স্থানীয় চিপ দিয়ে তৈরি স্মার্টফোন উন্মোচনের পর চিপ ও চিপ তৈরির কাঁচামাল রফতানিতে চীনের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে চীনের আধিপত্য রোধে দীর্ঘদিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

এআই প্রযুক্তির জন্য ডাটা সেন্টারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এআই সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে ও পরিচালনা করতে প্রয়োজন শক্তিশালী কম্পিউটার ও অবকাঠামো। ডাটা সেন্টারগুলোয় এআই প্রযুক্তি উন্নত ও পরিচালিত হয়। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিরও ভবিষ্যৎ হয়ে উঠেছে ডাটা সেন্টার। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত এআই সিস্টেমগুলো শক্তিশালী কম্পিউটার চিপ দিয়ে ডাটা সেন্টারে তৈরি হয়। যেমন এনভিডিয়া গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ও উচ্চ গতির মেমরি চিপগুলো এআই প্রযুক্তির বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তবে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক অত্যাধুনিক এআই চিপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দ্বারা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। এসব চিপ বিশেষ অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু দেশে বিক্রি করা যাবে না। এগুলোর অ্যাকসেসে যুক্তরাষ্ট্র চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে দেশটি মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা এড়াতে চিপগুলোর নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করতে কাজ করছে। অন্যদিকে এআই হাব হওয়ার জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাজাখস্তান ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো ডাটা সেন্টারগুলোয় প্রচুর বিনিয়োগ করছে। 

টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক ক্রিস মিলার বলছেন, ‘চিপ, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডাটা সেন্টার গভীরভাবে সংযুক্ত। হাই এন্ড রফতানি নিয়ন্ত্রিত চিপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানিগুলোকে এআই সিস্টেম কার্যকরভাবে চালাতে সক্ষম করে তোলে। চলমান প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে চিপস ও ক্লাউড কম্পিউটিং গভীর ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে প্রতিফলিত করে। আজকের এআই সিস্টেমগুলো বেসামরিক ও সামরিক উভয় ব্যবহারেই সহায়ক। যেমন এআই খাদ্য সরবরাহের অ্যাপ তৈরি করে দৈনন্দিন কাজকে সহজ করছে, আবার এটি উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করছে বা ড্রোন হামলার নির্দেশনার মতো আরো সংবেদনশীল কাজে এটি ব্যবহার করা হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এতকাল ধরে চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন জাহাজ বা ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যার মতো ক্ষেত্রে চলেছে, কিন্তু এখন এ লড়াই এআই অ্যালগরিদমগুলো কারটা কত ভালো সে ক্ষেত্রে চলছে।”

আরও