নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো (গ্লোবাল নর্থ) হাত খুলে অর্থ খরচ করার যে স্বাধীনতা ভোগ করে, তা কেবল সম্ভব হচ্ছে গরিব দেশগুলোকে (গ্লোবাল সাউথ) শ্রমের ন্যায্যমূল্য না দেয়ার কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী দেশগুলো তাদের প্রতি ঘণ্টার শ্রমের বিনিময়ে গরিব দেশগুলোর কাছ থেকে ১১ ঘণ্টার শ্রম আদায় করে। গবেষণাটি করেছেন স্পেনের ইউনিভার্সিটি অটোনোমা দে বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা। ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্রমের অসম বিনিময়’ শিরোনামে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি ২৯ জুলাই নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) মানদণ্ড অনুসারে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ক্যারাবিয়ান, এশিয়া (ইসরায়েল, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া বাদে) এবং ওশানিয়া (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বাদে) অঞ্চলের দেশগুলো গ্লোবাল সাউথের অন্তর্গত। অন্যদিকে নর্দান আমেরিকা, ইউরোপ, ইসরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গ্লোবাল নর্থের অন্তর্গত। গবেষণার অংশ হিসেবে ১৯৯৫-২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বে উৎপাদিত মোট বাণিজ্যিক পণ্যের মূর্ত শ্রম পরিমাপ করেন গবেষকরা। এর মধ্যে ২০২১ সালের হিসাবে দেখা যায়, গ্লোবাল সাউথ থেকে ৯০ হাজার ৬০০ কোটি ঘণ্টার শ্রম আমদানি করে গ্লোবাল নর্থ। এর বিনিময়ে গ্লোবাল নর্থকে পরিশোধ করতে হয়েছে মাত্র আট হাজার কোটি শ্রমঘণ্টা। অর্থাৎ, গ্লোবাল নর্থের প্রতি ১ ঘণ্টার শ্রমের বিপরীতে গ্লোবাল সাউথকে পরিশোধ করতে হয় ১১ ঘণ্টা। হিসাব বলছে, ২০২১ সালে গ্লোবাল নর্থের তুলনায় গ্লোবাল সাউথকে প্রায় ৮২ হাজার কোটি ঘণ্টা বেশি শ্রম পরিশোধ করতে হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের এক বছরের মোট শ্রমঘণ্টার চেয়ে বেশি। গবেষকরা বলছেন, গ্লোবাল নর্থে মজুরির হিসাবে ২০২১ সালের এ বাড়তি শ্রমের মূল্য ১৮ দশমিক ২৮ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি) ডলার।