ওভারিয়ান সিস্ট হলো নারীর ডিম্বাশয়ের মধ্যে একটি তরলে ভরা থলি। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ব্যস্ততা, বিভিন্ন ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে ওভারিয়ান সিস্ট বেশি দেখা যায়। সিস্ট সাধারণত মেয়েদের ২০-৪০ বছর বয়সে বেশি হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ৩-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ সময়ে অনেকের মাসিক অনিয়মিত এবং দেরিতে হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যেকোনো উপসর্গে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন হয়?
ডিম্বাশয় হলো মেয়েদের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ। এখান থেকে সাধারণত প্রতি মাসে একবার ডিম্বাণু এবং মেয়েদের হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ হয়। এ কাজগুলো সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে মস্তিষ্কের পিটুইটারি ও হাইপোথ্যালামাস নামক অংশের মাধ্যমে। কোনো কারণে এদের কাজের সমন্বয় নষ্ট হলে ওভারিতে সিস্ট দেখা দিতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি
একাধিক সিস্টকে একসঙ্গে বলা হয় পলিসিস্টিক। ছোট ছোট সিস্ট (১০-১২টি) পুঁতির মালার মতো দেখতে ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে থাকে। এ সিস্টের জন্য ওভারির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এটি বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। ২০ বছরের নিচে এর প্রবণতা আরো বেশি। লক্ষণ হিসেবে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। অনেকেই ভাবেন, পরিবারে পলিসিস্টিক ওভারির ইতিহাস থাকলে এ রকম হতে পারে। তবে এ ধারণা সবসময় সত্যি নয়। আসলে এ অবস্থার কারণ হিসেবে বলা হয় অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য বা কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন হরমোনের আধিক্য। এদের শরীরে ইনসুলিন রিয়্যাক্ট করে না। ফলে এক ধরনের ইনসুলিন রেজিট্যান্স তৈরি হয়। ফলে ওজন দ্রুত বাড়তে থকে ও ডায়াবেটিসের প্রবণতাও দেখা দেয়।
পলিসিস্টিক রোগীদের লক্ষণ
• মাসিক অনিয়মিত হওয়া
• অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
• মুখে ও শরীরে অত্যধিক অবাঞ্ছিত লোম
• শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত ঘাড়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ
• মুখে অতিরিক্ত ব্রণ
• অতিরিক্ত চুল পড়া, এমনকি কারো কারো মাথার সামনের দিকে টাক পড়তেও দেখা যায়
জটিলতা
• স্থূলতা
• বন্ধ্যাত্ব
• ডায়াবেটিস
• এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
প্রতিকার
প্রথমত, রোগ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে, যাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের সন্তান ধারণে অসুবিধা হচ্ছে তাদের মেটাফরমিন নামে এক ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। এটি ডায়াবেটিসের ওষুধ হওয়া সত্ত্বেও ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। এ ধরনের ওষুধ ধৈর্যের সঙ্গে তিন থেকে ছয় মাস খেয়ে যেতে হবে। অবাঞ্ছিত লোমের জন্য ইলেকট্রোলাইসিসের সাহায্য নিতে হতে পারে।
লেখক: ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল