১০ বছরে দেশে রাসেলস ভাইপারের দংশন সবচেয়ে বেশি চাঁপাইনবাবগঞ্জে

গত ১০ বছরে মানুষ রাসেলস ভাইপারে মোট দংশিত মানুষের অর্ধেকই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গতকাল দুপুরে রাসেলস ভাইপারের দংশন বিষয়ক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ১০ বছরে মানুষ রাসেলস ভাইপারে মোট দংশিত মানুষের অর্ধেকই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গতকাল দুপুরে রাসেলস ভাইপারের দংশন বিষয়ক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সারা দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ৯ জুলাই পর্যন্ত ৬১০টি সর্পদংশন বা সাপে কাটার তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ সময় সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী তিনজন। দেরি করে হাসপাতালে আসাটাই রোগী মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩৫ জন রোগীর তথ্য আছে, যারা রাসেলস ভাইপারের কামড়ের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ রোগীরা ৮ ঘণ্টা দেরিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ওই হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে বিষধর ৭৩টি ও ১৮টি চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপে কাটা রোগী। এতে মোট ১১ জন রোগী মারা যায়, যার মধ্যে চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা গেছে পাঁচজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চন্দ্রবোড়া ভাইপার ডি-গ্রুপের একটি সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে সাপের বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।

অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘আমাদের কাছে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজের তথ্য আছে। অন্যরা কিন্তু তথ্য সেভাবে দিতে পারছে না। কারণ হয়তো তারা সাপ চেনার ক্ষেত্রে তেমন অভিজ্ঞ নয়। মৃত্যু তো যেকোনো সাপের কামড়ে হতে পারে।’

তিনি জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটা তথ্য তারা পেয়েছেন। সেখানে এ বছর দুজন রোগীকে রাসেলস ভাইপারে দংশন করেছে বলে সন্দেহ করা হয়। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর রেফার করে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ বছর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে সাপে কাটা তিন রোগীর তথ্য এসেছে, যার মধ্যে একটি ছিল রাসেলস ভাইপারে কামড়ের ঘটনা। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার নিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য গুজবে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্প দংশন একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, দেশের চার লাখের বেশি মানুষ সর্প দংশনের শিকার হয়। এর মধ্যে মারা যায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ। দেশে থাকা প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। 

কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফায়েজ।

সর্প দংশন বিষয়ে জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়নসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন কাজ করছে বলে জানানো হয়। ডা. রোবেদ আমিন জানান, দেশে সর্প দংশন রোধের কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এ কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে। বিষধর সর্প দংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না। ভারতে তৈরি (চারটি প্রধান বিষধর সাপের বিরুদ্ধে প্রস্তুত) অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে অসংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়।

আরও