১০ মাসের প্রকল্প, দুই বছরে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ

সাতক্ষীরায় পাড়ের মাটিতেই আবার ভরাট হচ্ছে বেতনা নদী

সাতক্ষীরার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে পরিচিত বেতনা নদী। একসময় ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা নদীপথে সাতক্ষীরা শহরে আসতেন বাণিজ্য করতে।

সাতক্ষীরার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে পরিচিত বেতনা নদী। একসময় ভারত চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা নদীপথে সাতক্ষীরা শহরে আসতেন বাণিজ্য করতে। পলি জমে দখলের কারণে নদীটি ভরাট হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাণিজ্যিক রুটটি। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ২০২২ সালে খনন শুরু হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না বলে মনে করেন নদীপারের বাসিন্দারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মাটি কেটে রাখা হচ্ছে নদীপারেই। বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একের পর এক হাতবদলের কারণে পুনর্খননকাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। একেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিন কাজ করার পর টাকা নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে আসে অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হওয়ায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজের অনুকূলে ৪৮ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গায় বেতনা নদীর খননকাজ করছে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমরা কাজটি নিয়েছি কিছুদিন হলো। এর আগে আক্কাস আলী নামে এক ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তবে তিনি কাজ রেখে চলে যান। পরবর্তী সময়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দায়িত্বে দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শেষ করব বলে আশা করছি।

ঝাউডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আশিষ কুমার আব্দুর রশিদ জানান, প্রকল্পের কাজ এক টানা হচ্ছে না। এক ঠিকাদার কিছুদিন করার পর চলে যান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেতনা নদী যেভাবে খনন হচ্ছে তাতে খুব উপকারে আসবে বলে মনে হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ছে। মূল নদীর ৫০ শতাংশও খনন হয়নি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন--এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার হাজিপুর থেকে কলারোয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদকে ২০২২ সালের ৩০ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১০ মাস মেয়াদি প্রকল্পকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২১ জুন। ১০ মাসের পরিবর্তনে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।

নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ঠিকাদারের যোগসাজশে বেতনা নদী পুনর্খননে অনিয়ম করছেন। মূল ঠিকাদার কেন কাজ হস্তান্তর করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোতজন কেনইবা সুযোগ করে দেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের কাজ এক ঠিকাদার অন্য ঠিকাদারকে দিতে পারবে না। এতে কাজের মান ভালো হয় না। বেতনা নদী পুনর্খনন প্রকল্পে শুরু থেকে অদ্যবধি ভালো কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া যেভাবে খনন করা হচ্ছে তা কোনো কাজে আসবে না।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঠিক বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নদী খনন শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেই বর্ষা চলে আসে, তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থও দেয়া হয়েছে কাজের অগ্রগতি বিবেচনা না করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিজে না করে সাতক্ষীরার আক্কাস আলী নামে এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আক্কাস আলী কাজটি করতে সময়ক্ষেপণ করছিলেন। এক পর্যায়ে খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের কাছে হস্তান্তর করেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ।

ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালীর ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কাজটি প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরার আক্কাস আলীকে দিয়ে আমি ভুল করেছি। তিনি কাজটি নিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেছেন। পরবর্তী সময়ে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজকে কাজটি দেয়া হয়েছে। তারা খননকাজ দ্রুত করছে। তাছাড়া শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে। কাজে কোনো ত্রুটি হবে না।

ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন--এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কিছুদিন হলো আমি সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। বেতনা নদী পুনর্খননে কোনো অনিয়ম হলে সেটা মেনে নেয়া হবে না। কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। কাজের অনুকূলে এখন পর্যন্ত ঠিকাদারকে কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিল দেয়া হয়েছে।

আরও