প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে গতকাল তারা সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন। পরে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার আদালত সেটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আজ শুনানির জন্য রেখে আদেশ দেন।
আদালতে দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম হারুনুর রশীদ খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান।
শুনানির পর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের পক্ষে এ আবেদন করা হয়নি। আবেদনটি করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে। কেননা যারা আন্দোলন করছেন তাদের আন্দোলনের একটি মোটিভ (উদ্দেশ্য) আছে। আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের জাস্টিফিকেশনের (ন্যায্যতার) জন্য আবেদনটি করেছেন।’
দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে আবেদনটি করা হয়েছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘আরো একজন শিক্ষার্থী আবেদনকারী হিসেবে যুক্ত হবেন। সে আবেদন আমরা প্রস্তুত করছি।’
এদিকে আদালতে আবেদনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বডি থেকে কোনো প্রতিনিধি হাইকোর্টে যাননি। আমাদের এক দফা দাবি দেশের নির্বাহী বিভাগের কাছে “সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।” এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরির নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশসহ ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এর প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
কোটা পদ্ধতি বাতিলের এ পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র কেন স্বেচ্ছাচারী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সে রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এ রায়ের পর ফের কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।