এশিয়ার দেশগুলোয় প্রযুক্তি খাতে টেলিকম ও টেক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক সম্ভাব্য ভোক্তার উপস্থিতির কারণে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টগুলো। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির গতি ও মানুষের জীবনমান বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর টেলিকম রিভিউ।
প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে আগামী এক দশকের মধ্যে এশিয়া বিশ্বের মোট জিডিপির ৬০ শতাংশের দখল নেবে। গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি খাতও উন্নত হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের প্রভাব এশিয়ার বাজারেও পড়েছে। তথ্য বলছে, এশিয়ায় ২০২৩ সালে যৌথ মূলধনি ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে কম। গত বছর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮১০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এ পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫২০ কোটি ডলার এবং ২০২১ সালে ১৮ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার।
তবে চলতি বছর আবারো বিশ্ব থেকে এশিয়ার প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ক্রমেই নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চল নিয়ে আগ্রহী। এ বাজার এরই মধ্যে দ্রুতবর্ধনশীল বাজার হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
গত এপ্রিলে অ্যাপলের সিইও টিম কুক ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। এ সময় অ্যাপলের সিঙ্গাপুর শাখার সম্প্রসারণে ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেন তিনি। এ বিনিয়োগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় ব্যয় হবে। সিঙ্গাপুর এআই হাবে পরিণত হতে চায়। অ্যাপলের বিনিয়োগ দেশটিকে লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।
প্রায় একই সময়ে মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলাও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড সফর করেছেন। এ সময় ইন্দোনেশিয়ায় ক্লাউড ও এআই অবকাঠামো গড়ে তুলতে চার বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন তিনি। এটি মাইক্রোসফটের ২৯ বছরের ইতিহাসে দেশটিতে করা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ডাটা সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন সত্য নাদেলা। মালয়েশিয়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ ও দুই লাখ জনশক্তিকে এআই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে মাইক্রোসফট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের ফলে দেশগুলোর ডিজিটাল সক্ষমতা ও এআই পরিষেবার মান বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে।
বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশগুলোয়। ইন্দোনেশিয়ায় টেক কোম্পানি বাইটেরা একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছে। দেশটির ডাটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল ইকোনমিকে শক্তিশালী করাই এর লক্ষ্য। একই উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি দ্রুততর কানেক্টিভিটিসম্পন্ন ডাটা সেন্টার ডিজাইন করেছে। এছাড়া দেশটির রাজধানী জাকার্তার দক্ষিণে ডাটা সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে টেক কোম্পানি বিডিএক্স ইন্দোনেশিয়া। ১৫ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত ডাটা সেন্টারটি বিশ্বমানের পরিষেবা প্রদানে সক্ষম। অদূর-ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতিতে এটি বড় অবদান রাখতে যাচ্ছে। একই লক্ষ্য নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছে দেশটির দুই টেক কোম্পানি ইন্দোস্যাট ও আইটিইউ।
অন্যদিকে প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধিতে থাইল্যান্ড সরকার ও আলিবাবার মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। দেশটিতে উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করাতে উভয় পক্ষ একত্রে কাজ করবে। এক্ষেত্রে এআইএস নামের একটি কোম্পানিও এগিয়ে এসেছে।
মালয়েশিয়ার ডিজিটালাইজেশনে দেশটির তিন কোম্পানি সেলকমডিগি, সফটব্যাংক ও এসসি-নেক্স একসঙ্গে কাজ করছে। দেশটির টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে এ জোট।
সর্বশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নোকিয়া ও ট্রু গ্রুপ অংশীদারি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ার ফলে দেশগুলোয় ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়বে। সে সঙ্গে দেশগুলোর অর্থনীতিও নতুন গতি লাভ করবে। ফলে ভবিষ্যতে আরো টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে পারে বৃহত্তর এশিয়া অঞ্চল।
এদিকে, সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি খাত বিকাশে দেশগুলোর সরকারও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। চীনা সরকার ‘ডিজিটাল সিল্ক রুট’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় এআই, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ৫জি প্রযুক্তির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করবে দেশটি। চীনের পাশাপাশি ভারত সরকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।