বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকায় মেট্রোরেল চালু যেন রাজধানীর ব্যস্ত জীবনকে করেছে গতিময়। আরো সহজ ও বাসযোগ্য। এর সুফল সবচেয়ে বেশি পাচ্ছেন কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা। কারওয়ান বাজার হয়ে মেট্রোতে আমাদের গন্তব্য শেষ স্টেশন উত্তরা। উত্তরা থেকে অটোতে তুরাগ নদের তীর ধরে আমরা এগিয়ে চলছি তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিশাতনগরে ছয় বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)। আমরা যখন পৌঁছাই তখন ঠিক বেলা গড়িয়ে দুপুর। মেইন সড়কের পাশে গাড়ি থেকে নামলেই চোখে পড়বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতলবিশিষ্ট নান্দনিক স্থায়ী ক্যাম্পাস। মেইন ফটক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যেতে যেতে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর এ ক্যাম্পাসের একটি লক্ষণীয় বিষয় শিক্ষার্থীদের ড্রেস সেন্স। তাদের অ্যাপিয়ারেন্সই বার্তা দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের বিশেষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। হাল ফ্যাশনের সব আপডেট আর ব্যতিক্রমী পোশাক শোভা পাচ্ছে তাদের পরনে। কেউ কেউ পরেছেন নিজের ডিজাইন করা পোশাক, হাতে ঝুলছে নিজের ডিজাইনে তৈরি ব্যাগ। যেন নিজের ডিজাইন, পোশাকে নিজেই মডেল।
ইনস্টিটিউট থেকে ইউনিভার্সিটি
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএফটি) হিসেবে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের স্বনামধন্য কয়েকজন শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগীর দূরদর্শী উদ্যোগের ফসল। ১৯৯৯ সালের দিকে তৎকালীন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট আনিসুর রহমান সিনহার উদ্যোগে একটি ইনস্টিটিউট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমে বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের দায়িত্ব পান হারুন-অর-রশিদ। পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করেন সিরাজুল হক ও বেনজীর আহমেদ। সর্বশেষ সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর ইউ সিদ্দিক বোর্ডের দায়িত্বে থাকাকালে ২০১২ সালে ইনস্টিটিউট থেকে পরিবর্তিত হয়ে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) হয়। বর্তমানে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এক
ক্যাম্পাসে সব সুবিধা
বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে সুদৃশ্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সুবিস্তৃত ক্যাফেটেরিয়া, সুবিশাল খেলার মাঠ, মেয়েদের হোস্টেল, অত্যাধুনিক সরঞ্জামসমৃদ্ধ জিমনেশিয়াম, প্রশিক্ষকসহ সুইমিং পুল, ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা কমন রুম, তিনটি প্লে-গ্রাউন্ড, একাধিক মিলনায়তন, সেমিনার হল। এছাড়া যুগোপযোগী শিক্ষা উপকরণ নিয়ে বিইউএফটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গড়ে তুলেছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাও। প্রতিটি বিভাগে স্বতন্ত্র ল্যাব সুবিধা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা, শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে রয়েছে ২০টি ক্লাব। তুলনামূলক কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাসহ ধূমপান, মাদক ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ বিইউএফটিকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।
যা পড়ানো হয়
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদে ১৪টি বিভাগ, ১৫টি প্রোগ্রাম, একটি ডিপ্লোমা কোর্স এবং তিনটি সার্টিফিকেট কোর্সে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এছাড়া রয়েছে একটি ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, যেখানে এক বছর মেয়াদি পিজিডি প্রোগ্রাম, ছয় মাস মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স এবং তিন মাসের শর্ট কোর্স পড়ানো হয়। অ্যাপারেল স্টাডিজ অনুষদের অধীনে রয়েছে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ; ফ্যাশন স্টাডিজ অনুষদে ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগ, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি; টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, নিটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদে রয়েছে ইংরেজি ও সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগ; বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ; ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সায়েন্স অনুষদের অধীনে রয়েছে সায়েন্স বিভাগ এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ। অন্যদিকে পাঠদান প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল ও সময়োপযোগী রাখার জন্য এলএলবি, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল রিসার্চ ও ফার্মেসির মতো বেশকিছু নতুন প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।
বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও