টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে।’ তিনি গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘আইসিপিডি-৩০: জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক বৈশ্বিক সংলাপ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ইভেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণে এ কথা বলেন।
এ অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ, বুলগেরিয়া, জাপান ও ইউএনএফপিএ। এ সংলাপ পরিবর্তনশীল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ খুঁজে বের করে বিশ্বের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের রূপান্তর একটি সমৃদ্ধ বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা খাতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পরিমাণ ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো আন্তরিক হতে হবে।’
সরকারপ্রধান জানান, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ বৈশ্বিক সংলাপ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’-এর জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে সহায়ক হবে। জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সামিট অব দ্য ফিউচারের ঘোষণাপত্রে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আরো কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে সবার, বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে জনস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বিশ্বের সব মানুষের বিশেষ করে মা, শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরো জোরদার করতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম, মালদ্বীপের সামাজিক ও পরিবার উন্নয়নমন্ত্রী আইশাথ শিহাম, কিরিবাতির নারী, যুব, ক্রীড়া ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্টিন মোরেত্তি, জাপানের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় উপমন্ত্রী ইয়াসুশি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। বুলগেরিয়া সরকারের প্রতিনিধিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অতিসম্প্রতি আমরা জাতীয় জনসংখ্যা নীতিমালা-২০১২ হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হালনাগাদ নীতিমালার মাধ্যমে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষতা উন্নয়ন, অগ্রগতি ও বুনিয়াদি শিক্ষার মাধ্যমে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করা হবে। এ নীতিমালা ২০৪১ থেকে ২০৬১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের মানুষের গড় আয়ু ২০২৩ সালে বেড়ে ৭২ বছর ৩ মাসে পৌঁছেছিল। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২১, যা ২০০৬ সালে ছিল হাজারে ৮৪। একইভাবে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ২০০৬ সালের ৩৭০ থেকে ১৩৬-এ নেমেছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ কিশোরীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ রেখেছে। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের শ্রমশক্তির ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৩’ অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং এ অঞ্চলে প্রথম। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আগের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ছিল।