যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল জায়ান্ট ওয়ালমার্ট ইনকরপোরেটেড সম্প্রতি তাদের করপোরেট সদর দপ্তরে শতাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এরই সঙ্গে ওয়ালমার্ট কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কর্মরত অধিকাংশ রিমোর্ট কাজ করা কর্মীদের তিনটি অফিসে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন প্রাথমিকভাবে ভার্চুয়াল কাজকে সমর্থন করলেও সে কৌশলে পরিবর্তন আনতে চলেছে ওয়ালমার্ট। এমন তথ্য উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
রিটেইলার কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। যাদের প্রায় ১৬ লাখ কর্মী রয়েছে। মার্কিন জনগণের প্রায় ৯০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে ওয়ালমার্ট স্টোরের সঙ্গে যুক্ত। দেশটির প্রতি ১০ মাইলের মধ্যে তাদের অন্তত একটি স্টোর রয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ওয়ালমার্টের প্রায় ২১ লাখ কর্মী রয়েছে।
স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের ফলে ওয়ালমার্টের ডালাস, আটলান্টা ও টরন্টো অফিসের বেশির ভাগ কর্মী প্রভাবিত হবে। বেশির ভাগ স্থানান্তর কোম্পানির আরকানসাসের বেনটনভিল সদর দপ্তরে হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। তবে কিছু কর্মীকে সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া বা হোবোকেন, নিউ জার্সি ও নিউইয়র্ক অঞ্চলের ওয়ালমার্ট অফিসে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৪ হাজার ৬০০টির বেশি স্টোর পরিচালনা করে কোম্পানিটি। পাশাপাশি ওয়ালমার্টের সাবসিডিয়ারি স্যামস ক্লাবেরও প্রায় ৬০০ ওয়্যারহাউজ রয়েছে। সেখানে আরো ৩০টির বেশি ওয়্যারহাউজ চালুর পরিকল্পনা করছে তারা।
ওয়ালমার্টের চিফ পিপল অফিসার ডোনা মরিস বলেন, ‘আমরা রিমোর্ট বা দূর থেকে কাজ করা অধিকাংশ কর্মীদের পাশাপাশি ডালাস, আটলান্টায় ও টরন্টো গ্লোবাল টেক অফিসের বেশির ভাগ সহযোগীকে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ পদক্ষেপের অন্যতম উদ্দেশ্য আরো বেশি কর্মীদের একত্রিত করা। যার মাধ্যমে ওয়ালমার্টের করপোরেট কালচারকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর্মীদের ক্যারিয়ার বিকাশ ঘটানো যায়।’
রিটেইল জায়ান্ট আরো জানিয়েছে, ওয়ালমার্ট তার ব্যবসায়ের কিছু অংশে পরিবর্তন আনার কারণে তার সদর দপ্তরের কয়েকশ পদ কমিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোম্পানি এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি সপ্তাহে কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে রিমোর্ট বা দূরবর্তী কর্মীদের স্থানান্তর বা চাকরি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। যারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা ওয়ালমার্টে কাজ করা প্রতি বছরের জন্য দুই সপ্তাহের সমপরিমাণের বেতন পাবেন। প্রতিবেদনে অনুসারে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ডালাস, আটলান্টা ও টরন্টো অফিস বন্ধ করে দিতে পারে ওয়ালমার্ট। তবে ওয়ালমার্ট জানিয়েছে, তারা ছাঁটাই ও স্থানান্তর হওয়া কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
অন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর মতো ওয়ালমার্টও কভিড-১৯ মহামারীর পরবর্তী সময়ে কাজের কৌশল পরিবর্তন আনছে। যদিও মহামারীর শুরু দিকে ওয়ালমার্ট রিমোর্ট বা দূরবর্তী কাজ পদ্ধতিকে সমর্থন করেছিল। তবে ওয়ালমার্ট ধীরে ধীরে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ২০২৩ সালে তারা তিনটি প্রযুক্তি অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। পাশাপাশি কিছু কর্মীকে কেন্দ্রীয় করপোরেট হাবগুলোয় স্থানান্তর করেছিল।
ওয়ালমার্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম আরকানসাসে ৩৫০ একর জমির ওপর নতুন একটি সদর দপ্তর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। যেখানে ১২টি বিল্ডিং থাকবে, যা ১৫ হাজারেরও বেশি কর্মচারীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। কোম্পানিটি ২০২৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ক্যাম্পাস খোলারও পরিকল্পনা হাতে রেখেছে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ১৫০টির বেশি বড় স্টোর স্থাপন করতে চায় তারা। নতুন স্টোরের পাশাপাশি বেশকিছু ছোট স্টোর সংস্কার করবে ওয়ালমার্ট।