পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার রাজি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ও নিজ
ভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব রয়েছে।
এ সময় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে একটি পার্লামেন্টারি
ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম গঠনে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে রাজী হয়েছে। এটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়
তা নিয়ে উভয় দেশ কাজ করবে।
সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় মিয়ানমার বিষয়ক মালয়েশিয়ার উপদেষ্টা গ্রুপের
চেয়ারম্যান তান শ্রী সৈয়দ হামিদ আলবারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে
জাতীয় সংসদ ভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরে নিতে
রাজি আছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে উদগ্রীব হয়ে বসে
আছে। বাংলাদেশ সরকারও তাদেরকে ফেরত পাঠানোর জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব পক্ষ রাজি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ
কেন? কেন রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হচ্ছে না? এর কারণ খতিয়ে দেখা দরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে তারা অত্যন্ত মানবতর
জীবন যাপন করছেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে এ
অঞ্চলে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা শুধু মিয়ানমার ও বাংলাদেশের
নয় বরং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্যও বড় সমস্যার কারণ। এমনকি এটি বৈশ্বিক সমস্যা
হিসেবেও আবির্ভূত হওয়ার সংশয় রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য
দেশের সঙ্গেও নিয়মিতভাবে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও কর্মের
পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ জানালে তান শ্রী সৈয়দ হামিদ
আলবার মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদেরকে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ই-ভিসা,
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্র এবং এয়ারলাইনসের
ভ্রমণ টিকিটসহ যাবতীয় ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই-বাছাইপূর্বক কর্মী প্রেরণের আহ্বান জানান।
বৈঠকে মিয়ানমার বিষয়ক মালয়শিয়ার উপদেষ্টা গ্রুপের চেয়ারম্যান তান
শ্রী সৈয়দ হামিদ বিন আলবার মিয়ানমারের নির্যাতিত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার
জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা
করে বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের
নিজ ভূমিতে ফিরে যেতেই হবে।
মালয়েশিয়ার সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান
হচ্ছে নিরাপদ, স্বেচ্ছা আর মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। আর নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন
সফল করতে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
উল্লেখ্য যে, আগামী বছর মালয়েশিয়া আশিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব পাবে।
সাক্ষাৎকালে মিয়ানমার বিষয়ক মালয়েশিয়ার উপদেষ্টা গ্রুপের অন্যান্য
সদস্য ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন।