গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেন কমেছে। গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ শেয়ারদর ছিল নিম্নমুখী। দিনভর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পরই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল। ক্রেতার অভাবে বেশির ভাগ শেয়ারদর সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমায় আটকে যায়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এদিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা গেছে। গতকাল ডিএসইএক্স সূচক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮৬ পয়েন্টে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫ হাজার ৬৬৭ পয়েন্ট। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ গতকাল দিন শেষে ২৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২ হাজার ১৮ পয়েন্ট। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ২৪২ পয়েন্ট। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।
গতকাল ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৬৪ কোটি টাকা, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৯৬৮ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৯৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ৩৪৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৫টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে ছিল ওষুধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে ছিল বস্ত্র খাতের। ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ১ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
ডিএসইতে গতকাল বিবিধ খাত বাদে বাকি সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ২ দশমিক ৮ শতাংশ, সাধারণ বীমা খাতে ২ দশমিক ৬, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২ দশমিক ৪, সেবা ও আবাসন এবং সিমেন্ট খাতে ২ দশমিক ২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১০৪ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৯ হাজার ৮৩৮ পয়েন্ট। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৭১ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৫৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ১৯৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বিএমবিএর সঙ্গে ডিএসইর বৈঠক: গতকাল বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুনের নেতৃত্বে সংগঠনিটর ১৫ সদস্যের কমিটির সঙ্গে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদসহ এক্সচেঞ্জটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।৷
বৈঠকে বিএমবিএর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে দ্বৈত কর, গুণগত মানসম্পন্ন আইপিও আনা, আইপিও প্রাইসিং সিস্টেম, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, মার্জার অ্যাকুইজিশন, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা, ঘন ঘন আইন-কানুন পরিবর্তন না করা, কাট-অফ প্রাইসের অধিক মূল্যে বিডকারীদের প্রো-রাটার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ প্রদান, আইপিওর কোটা ও লকড-ইন পিরিয়ডের কিছু সংশোধনী আনা, সিকিউরিটিজ ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে মার্কেট অ্যাপ্রোচ ও ইনকাম অ্যাপ্রোচ মেথড অনুসরণ করা, বিডিংয়ের সম্মতি পাওয়ার পরই রোড-শোর আয়োজন করা, মার্জিন ঋণের আইনে কিছু পরিবর্তন আনা, গবেষণায় জোর দেয়া ইত্যাদি বিষয় অন্যতম।