উজ্জ্বল আকাশচুম্বী অট্টালিকায় ভরা একটি শহর। সেখানে আকাশপথে, বাড়ি-ঘরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে এদিক-ওদিক উড়ে বেড়ায় উড়োজাহাজ। কোনো সায়েন্স ফিকশনের দৃশ্য নয় এটি। তবে লন্ডনের পরিবহন বিভাগের দাবি দুই বছরের ব্যবধানে এমন দৃশ্য দেখা যাবে লন্ডনেই।
লন্ডনের পরিবহন বিভাগ তাদের ফিউচার অব ফ্লাইট অ্যাকশন প্ল্যানে জানায়, ২০৩০ সালে স্বায়ত্তশাসিত এয়ার ক্যাবসহ ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্ববাসী প্রথম উড়ন্ত ট্যাক্সির আত্মপ্রকাশের সাক্ষী হতে পারে।
দেশটির বিমান পরিবহন ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্রাউন পরিবহনে আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তির রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এ পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে যে পরিবহন খাতে বিপ্লব সাধনের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং প্রবিধান আমাদের রয়েছে।
এছাড়াও মন্ত্রী ব্রাউন ফ্লাইং ট্যাক্সি এবং জরুরী পরিষেবা ড্রোন প্রবর্তনসহ পরিবহন বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে এ অগ্রগতি শুধুমাত্র মানুষের জীবন উন্নত করবে না বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উদ্দীপিত করবে।
তবে লন্ডন ছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় শহর এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে প্রথম হওয়ার দৌড়ে রয়েছে। সম্প্রতি ২০২৬ সালে বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দুবাই। নিউ ইয়র্ক ২০২৫ শেষ হওয়ার আগে তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উভয় শহরই ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানি জোবি এভিয়েশনের সঙ্গে কাজ করছে। জোবি এরই মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ম্যানহাটন হেলিপোর্টে তার উদ্বোধনী পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
অন্যান্য দেশের অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেকেই মনে করেন চীন বর্তমানে ইভিটিওএল প্রযুক্তিতে এগিয়ে রয়েছে। গত বছর চীনের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএসি) গুয়াংডং প্রদেশে অবস্থিত প্রযুক্তি কোম্পানি ইহ্যাং দ্বারা নির্মিত ইভিটিওএল ট্যাক্সিকে অনুমোদন দিয়েছে। সেই সঙ্গে এরই মধ্যে পর্যটন ফ্লাইট এবং জরুরি পরিষেবার জন্য ৮০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ১০০ ক্রাফট সরবরাহ করতে হেফেই শহরের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। এদিকে লন্ডনে তাদের পরিষেবা চালুর লক্ষ্যে সংস্থাগুলো এখনো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএ) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ১৫০ সংস্থা সক্রিয়ভাবে ইভিটিওএল (বৈদ্যুতিক উল্বম্ব টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং যানবাহন) বিকাশে নিযুক্ত রয়েছে। এ যানবাহনগুলো ব্যাটারি দ্বারা চালিত হয় যা এগুলোকে ঐতিহ্যগত দহন-চালিত পরিবহনের সবুজ বিকল্প করে তোলে। যদিও এরা প্রকৃতপক্ষে পরিবেশবান্ধব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইভিটিওএল প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় কম শব্দ করে বলে দাবি করেন এর ভবিষ্যৎ প্রস্ততকারকরা। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ইভিটিওএল প্রস্তুতকারক আর্চার এভিয়েশন দাবি করেছে যে তাদের বিমান ঘণ্টায় ৩০ মাইল বেগে যাওয়া গাড়ির তুলনায় কম শব্দ তৈরি করবে।
আবার এটি শহরাঞ্চলে ভার্টিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করবে। তবে ভার্টিপোর্টগুলোর বিকাশ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা এখনো বলা যায় না। কেননা জনসংখ্যা অনুযায়ী ইভিটিওএল পরিবহনের চাহিদা পূরণের জন্য কতগুলো ভার্টিপোর্ট তৈরি করা দরকার তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷এছাড়াও ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকায় এ ভার্টিপোর্ট নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে পাওয়াও আরেকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।
উইল নাথান ইভিটিওএল পরিবহনের জন্য লন্ডনে স্থানিক সীমাবদ্ধতা মোকাবেলায় উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি ইভিটিওএলের রুটগুলোর সুবিধাজনক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে লন্ডনের ছাদগুলো অভিযোজিত করতে পারে। তাছাড়া ইভিটিওএল উড়োজাহাজের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা নতুন বেসপোক ভার্টিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
এয়ার ট্যাক্সি পরিবহন ব্যবহারের সামর্থ্য নিয়েও চলছে বিতর্ক। কিছু এয়ার ট্যাক্সি কোম্পানি আশাবাদী প্রতি মাইল ২.৪০ ইউরো হিসাবে ভাড়া নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা একটি উবার বুকিংয়ের সঙ্গে তুলনীয়। তবে নাসার একটি সমীক্ষার প্রস্তাব অনুযায়ী ভাড়া এর চেয়েও বেশি হতে পারে। যা সর্বোচ্চ ৯ ইউরো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ উচ্চ উৎপাদন খরচ সামলে সাশ্রয়ী ভাড়া নির্ধারণ বেশ কঠিন হবে।
তবে উইল নাথান আলোকপাত করেছেন, ইভিটিওএল উড়োজাহাজের অপারেটিং খরচ প্রচলিত উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তিনি আশা করেন যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ঐতিহ্যবাহী স্থল পরিবহন মোড যেমন ট্রেন ও ট্যাক্সির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে৷