পেপটিক আলসার

সঠিক চিকিৎসায় পেপটিক আলসার নিরাময় হয়

খাদ্যথলি, খাদ্যনালির নিচের অংশে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনাম অংশে আলসার বা ঘা হলে তাকে পেপটিক আলসার বলে।

খাদ্যথলি, খাদ্যনালির নিচের অংশে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনাম অংশে আলসার বা ঘা হলে তাকে পেপটিক আলসার বলে। রোগীরা সাধারণত পেটে গ্যাস হলেই বা পেট ফোলা ভাব হলেই গ্যাস্ট্রিক আলসার মনে করেন। নিজ উদ্যোগেই ওষুধ সেবন করেন, যা মোটেও ঠিক নয়। পেপটিক আলসার সম্পর্কে জানা জরুরি। যাতে ভ্রান্ত ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় লাভ করা যায়।

কারণ:

গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসারের কারণ হিসেবে আগে অনেক ধারণা প্রচলিত ছিল। সর্বশেষ যে ধারণাটি প্রচলিত সেটি হলো, পেপটিক আলসার একটা জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি বা এইচ পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণস্থলে ঘা হয়। আরো একটা কারণ রয়েছে, যা সাধারণত পেপটিক আলসার হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সেটা হলো অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ। খাদ্যগুলো থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নামক একপ্রকার শক্তিশালী এমিও নিঃসরণ হয়ে থাকে। এ অ্যাসিড সাধারণত খাবার হজম করার সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কারো যদি এ অ্যাসিড নিঃসরণ বেশি হয়ে যায় তাহলে তা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে তার আলসার হতে সাহায্য করে।

লক্ষণ:

সাধারণত পেটের ওপরের অংশে ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়া পেট ফোলা ভাব, ভরা ভাব, অল্প খেলেই পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস হওয়া এমনকি পেট জ্বালাপোড়া, বমি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা খুব মারাত্মক হলে রক্তবমি ও কালো পায়খানা হতে পারে। ব্যথা হলে সাধারণত খাবারের আগে অথবা পরে হতে পারে। এমনকি ঘুমের মধ্যেও হতে পারে। ব্যথা সাধারণত একনাগাড়ে হয় না। কিছুদিন পর পর হতে পারে। উপরোক্ত যেকোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

অন্যান্য যে রোগে প্রায় একই রকম সমস্যা হয়: 

পিত্তথলির পাথর, প্যানক্রিয়াটাইটিস, খাবারের বদহজম এবং আরো অনেক রোগে একই রকম সমস্যা হতে পারে।

রোগ নির্ণয়:

পেটের অন্যান্য রোগও যেহেতু একই রকম সমস্যা সৃষ্টি করে তাই সেসব রোগ থেকে পেপটিক আলসার রোগের পার্থক্য নির্ণয় করা জরুরি। যেহেতু আলসার রোগ একটা জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে তাই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করাটা জরুরি। যেসব জায়গায় আলসার রোগ হয়, সেসব জায়গায় হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি জীবাণুর উপস্থিতি এবং আলসার বা ঘা নির্ণয় করতে হয়। এক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি সাধারণত প্রধান পরীক্ষা এবং আরো কিছু সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা দ্বারা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করতে হয়। এন্ডোস্কোপি সাধারণত প্রধান পরীক্ষা।

চিকিৎসা:

যেহেতু পেপটিক আলসার জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে সেজন্য জীবাণুনাশক ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা পেপটিক আলসারের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সবার উচিত অপ্রয়োজনীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা। সঙ্গে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। রোগ নির্ণয় না করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।  এতে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সুতরাং আমাদের সবার উচিত সঠিক রোগ নির্ণয় করে পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

লেখক: ডা. এ কিউ এম মোবিন, সহকারী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ

আরও