মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে একাধিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের ওপর। বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশ গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে কেন্দ্র করে বয়কটের আহ্বান এসেছে বেশি, যার প্রভাবে ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রি কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ইন্দোনেশিয়ায় ইউনিলিভারের পণ্য বিক্রি প্রায় ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খবর সিএনএন।
ইউনিলিভারের অধীনে রয়েছে ভ্যাজলিন, ডাভ সাবান, রেক্সোনা ডিওডোরেন্টের মতো ব্র্যান্ড। এছাড়া গৃহস্থালি সামগ্রীতেও কোম্পানিটির বড় হিস্যা রয়েছে। এশিয়ার ২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় ইউনিলিভারের বাজার ক্রমে বর্ধনশীল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত বছরের শেষ প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রেতা হারিয়েছে এ কোম্পানি। বিক্রি কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এ পরিস্থিতি ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে ভোক্তারা বহুজাতিক কোম্পানির পণ্যগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন।
ইউনিলিভারের সিইও হেইন শুমাখার বলেন, ‘ভূরাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীভূত ভোক্তামুখী প্রচারণার কারণে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রি প্রভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় চতুর্থ প্রান্তিকে ডাবল ডিজিটে বিক্রি হ্রাস পেয়েছে ইউনিলিভারের।’
ম্যাকডোনাল্ডস, ইয়াম ব্র্যান্ড, স্টারবাকস, কেএফসি, পিৎজা হাটের মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ড সাম্প্রতিক এ বয়কটে প্রভাবিত হয়েছে। বিক্রি কমার বিষয়টি একাধিক প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে প্রকাশও করেছে।
গত সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা যায়, অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বয়কটের মুখে পড়েছে বৈশ্বিক রেস্তোরাঁ চেইন ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকস। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে ম্যাকডোনাল্ডসের বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও প্রভাবিত হয়েছে স্টারবাকসের বিক্রি।
যুক্তরাষ্ট্রের চেইন ফুড জায়ান্টগুলোর অন্যতম ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকস। গাজায় হামলার পর ইসরায়েলসংশ্লিষ্ট বেশকিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক ওঠে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকসের ভবিষ্যতে চাহিদার ওপর আরো প্রভাব ফেলতে পারে।
মাস কয়েক আগে স্টারবাকস ওয়ার্কার্স ইউনাইটেড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে টুইট করে। এ কারণে বয়কটের মুখোমুখি হয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে ইউনিয়নের পক্ষে ক্ষমা চাইলেও ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে ইসরায়েলি লাইসেন্সধারী সেনাদের ছাড় দেয়ার প্রস্তাব দেয় ম্যাকডোনাল্ডস। এ কারণে গাজায় আক্রমণের বিরোধীরা প্রতিষ্ঠানটি বয়কট করে।
মার্কিন আর্থিক সংস্থা টিডি কাউয়েনের বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু চার্লসের মতে, মধ্যপ্রাচ্য ম্যাকডোনাল্ডের বৈশ্বিক মোট বিক্রয়ে প্রায় ২ শতাংশ অবদান রাখে।
বার্গারের জন্য জনপ্রিয় এ রেস্তোরাঁর সিইও ক্রিস কেম্পজিনস্কি সম্প্রতি জানান, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে বিক্রি কমে গেছে। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে ফ্রান্সে, সেখানেও বিক্রি কমেছে।