২০১৪ সালে অ্যান্টিক শপ থেকে একটি ভিক্টোরিয়ান
পোশাক কিনেছিলেন সারাহ রিভার্স কোফিল্ড। দাম পড়েছিল ১০০ ডলার। পেশায় প্রত্নতাত্ত্বিক
এ নারী স্বাভাবিক আগ্রহের জায়গা থেকে পুরনো জিনিস কিনে থাকেন। সেইবারও তাই হয়েছিল।
কিন্তু ঘটনাটি কতদূর গড়াবে তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না তার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের
একেবারে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেইনের বাসিন্দা সারাহ। পোশাকটি কেনার পর তিনি আবিষ্কার
করেন, কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে নানান রহস্য। ছিল কিছু জায়গার মানচিত্র ও গোপন সংকেত
আঁকা ছেঁড়া দুটি কাগজ। পেয়েছিলেন একটি নামও- বেনেট।
প্রত্নতাত্ত্বিক হওয়ায় ঘটনাটি তলিয়ে
দেখার আগ্রহ গড়পরতা মানুষের চেয়ে বেশি সারাহর। করলেন তাই। গুপ্ত শব্দ ও হাতে আঁকা চিত্রের
বর্ণনাসহ পোশাকটির ছবি ব্লগে পোস্ট করেন। সারাহ চেয়েছিলেন, কাগজ দুটিতে থাকা সংকেতের
মর্ম উদ্ধার করুক কেউ। তবে সময় ও ব্যস্ততার চাপে তিনি ব্যাপারটি ভুলে যান।
কিন্তু সারাহর অজান্তেই গুপ্তলিপি ও সংকেত নিয়ে আগ্রহী অপেশাদার তরুণ স্লিউথ কাগজগুলো নিয়ে কাজ করছিলেন। স্লিউথ বেশকিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজে পান। যে কারণে কারো কারো মনে হয়েছিল পোশাকটির মূল মালিক বেনেট মূলত একজন গুপ্তচর।
২০১৭ সালে স্লিউথ নিজের শীর্ষ পাঁচ
অমীমাংসিত গুপ্তলিখনের তালিকায় বেনেটের পোশাকের কথা উল্লেখ করেন। স্লিউথ নানা রকম তথ্য
দিয়ে যাচ্ছিলেন, যার মধ্যে ছিল গৃহযুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির তত্ত্বও। তবে স্লিউথের এসব
তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছিলেন সারাহ কোফিল্ড।
সারাহ জানিয়েছিলেন, পোশাকটি যে ব্র্যান্ডের
তাদের ১৮০০ সালের ক্যাটালগগুলো দেখেছেন এবং কোনো সন্দেহ নেই যে পোশাকটি গৃহযুদ্ধের
২০ বছর পরে তৈরি হয়েছিল।
নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেনেটের
পোশাকের রহস্য ভেদ করেছিলেন কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক ওয়েন
চ্যান। তিনি প্রমাণ করেন যে, বেনেটেরে পোশাকের ভেতর পাওয়া রহস্যময় শব্দগুলো ছিল মূলত
একটি আবহাওয়া প্রতিবেদন!
গোপনীয়তা বজায় রাখতে ওই লেখায় দুর্ভেদ্য
শব্দ জোড়া দেয়া হয়েছিল, এমনটাও নয়। আসলে টেলিগ্রাফের যুগে আবহাওয়ার বিশদ প্রতিবেদন
লিখে বার্তা পাঠানো ছিল খরচসাপেক্ষ। তাই খরচ বাঁচাতেই সে সময় বিশদ বর্ণনার বদলে শর্ট
হ্যান্ডের প্রচলন ঘটেছিল। ওই সময় কোনোরকম কোডবুক তৈরি করা হয়নি বলেই বেনেটের পোশাক
আপাতদৃষ্টিতে রহস্যময় হয়ে উঠেছিল।