অষ্টমবারের মতো ফিফার বর্ষসেরা (দ্য বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার) হয়েছেন ইন্টার মিয়ামিতে খেলা আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। সোমবার রাতে লন্ডনে জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ী হিসেবে মেসির নাম ঘোষণা করা হয়।
ফিফার ওয়েবসাইটে লাইভ
বিবরণীতে বলা হয়েছে, এবার পুরস্কারটি জিততে মেসির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে ম্যানচেস্টার
সিটির আর্লিং হালান্ড ও পিএসজির কিলিয়ান এমবাপ্পের। ভোটাভুটিতেমেসি ও হালান্ড দুজনই
সমান ৪৮ পয়েন্ট পেয়েছেন। কিন্তু মেসি জিতেছেন জাতীয় দলের অধিনায়কদের ভোটে প্রথম পছন্দের
তালিকায় এগিয়ে থাকায়। ফিফার ‘রুলস অব অ্যালোকেশন’ এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফরাসি সুপারস্টার এমবাপ্পে ৩৮ পয়েন্ট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়।
মেসিকে ভোট দেয়া জাতীয়
দলের অধিনায়কদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের জামাল ভূঁইয়া, ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, ফ্রান্সের
এমবাপ্পে, মিসরের মোহাম্মদ সালাহ, স্কটল্যান্ডের এন্ডি রবার্টমসন, ওয়েলসের অ্যারন রামসে,
ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ প্রমুখ। এদিকে, জার্মানির ইকাই গুন্দোয়ান, ব্রাজিলের ক্যাসেমিরো
ভোট দিয়েছেন হালান্ডকে। মেসি নিজেও দিয়েছেন হালান্ডকে। যদিও অধিনায়কদের ভোটে তিনি সেই
হালান্ডকে হারিয়ে ফিফার বর্ষসেরা হলেন।
মেসির শোকেসটা ট্রফিতে
ঠাসা। এ নিয়ে মোট আটবার ফিফা বর্ষসেরা ও আটবার ব্যালন ডি’অর ট্রফি জিতেছেন তিনি। আর্জেন্টিনার
বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ১৬ বার! লা লিগার বর্ষসেরা হয়েছেন ছয়বার, উয়েফার সেরা হয়েছেন
তিনবার। স্পেনের লিগে সর্বোচ্চ গোলের পিচিচি পুরস্কার জিতেছেন আট মৌসুম। এভাবে মেসির
পুরস্কারের সংখ্যা গুণে শেষ করা কঠিন। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সে এসে পাওয়া এবারের ফিফা বেস্ট
পুরস্কারটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হলো।
চিরাচরিতভাবে ফিফার বর্ষসেরা
পুরস্কার দেয়া হয় এক বর্ষপঞ্জির পারফরম্যান্স বিচারে। তবে কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স
আগের বছরের পুরস্কারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় এবার ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩
সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত পারফরম্যান্সকে ফিফা অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে।
এই সময় মেসি পিএসজির হয়ে ৯ গোল করেন, জিতেছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান শিরোপা। এরপর ইন্টার
মিয়ামিতে যোগ দিয়ে সাত ম্যাচে করেন ১০ গোল, জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লিগস কাপ শিরোপা।
হালান্ড গত মৌসুমে প্রিমিয়ার
লিগে রেকর্ড ৩৬ গোল করেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলে করেছেন ক্লাব রেকর্ড
৫২ গোল। এর মধ্যে ২৮টি গোল করেছেন ২০২২ বিশ্বকাপের পর। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ
কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে গৌরবের ট্রেবল পূর্ণ করেন নরওয়েজিয়ান ফরওয়ার্ড। আগস্টে
সেভিয়াকে হারিয়ে জিতেছেন উয়েফা সুপার কাপও। চলতি মৌসুমে ২০ আগস্ট ডেডলাইনের আগে করেছেন
আরো দুই গোল। গত ডিসেম্বরে জিতেছেন ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাও, যা ডেডলাইনের পরের অর্জন।
মেসির মতোই পিএসজির হয়ে
লিগ ওয়ান শিরোপা জিতেছেন এমবাপ্পে। তিনি টানা পঞ্চমবারের মতো গোল্ডেন বুট জয় করেন।
ডেডলাইনের মধ্যে ১৮ গোল করেছেন ২৫ বছর বয়সী এমবাপ্পে।
সব মিলে এবার ‘ফিফা বেস্ট’
পুরস্কারে হালান্ডই ছিলেন ফেভারিট। যদিও সবাইকে চমকে দিয়ে মেসিই জিতলেন এই পুরস্কারটি।
ইন্টার মিয়ামির হয়ে অনুশীলন সেশন মিস করতে চাননি বলে তিনি এবারের অনুষ্ঠানে যাননি।
তার হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ফরাসি ফুটবল গ্রেট থিয়েরি অঁরি।
অবিশ্বাস্য বছর ও মৌসুম
কাটানো হালান্ডের হাতে পুরস্কারটি না ওঠায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হান্নাহ নামের
এক ফুটবল সমর্থন বিবিসিকে বলেন, ‘কীভাবে? এই মুহূর্তে যেকোনো দিনই আমি মেসির চেয়ে হালান্ডকে
এগিয়ে রাখব।’
জিকে নামের আরেকজন বলেছেন,
‘কোনোভাবেই সিটির সমর্থক হিসেবে বলছি না, কিন্তু হালান্ডের পুরস্কারটি লুট করা হয়েছে।
যে খেলোয়াড়টি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের বিপক্ষে গোল করে ট্রেবল জিতল তাকে বাদ দিয়ে কীভাবে
আপনি এমন একজনকে ভোট দিলেন যে কিনা গোল করেছে মেজর লিগ সকারে।’
অ্যান্ডি বলেন, ‘পুরস্কারটি
এতদিন তো ভালোই যাচ্ছিল, এবার সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারাল। মেসিকে নিয়ে অবিরত ঘোর এখন
লজ্জায় রূপ নিল। যদিও হালান্ডের মৌসুমকে কেউই হারাতে পারবে না।’
তবে মেসির পক্ষেও কথা
বলেছেন অনেকে। রাইয়ান বলেছেন, ‘সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ।’ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কার্ল
লিখেছেন, ‘লিওনেল মেসি হলেন থানোস। তিনি অপরিহার্য।’