নাগরিক প্লাটফর্মের ব্রিফিংয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

যে যতবার নির্বাচিত হয়েছে তার আয় গাণিতিক হারে তত বেড়েছে

যে যতবার নির্বাচন করেছে তার আয় গাণিতিক হারে তত বেড়েছে। সম্পদ বৃদ্ধির হারের সঙ্গে নির্বাচনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক প্লাটফর্মের ‘জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয়

যে যতবার নির্বাচন করেছে তার আয় গাণিতিক হারে তত বেড়েছে। সম্পদ বৃদ্ধির হারের সঙ্গে নির্বাচনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক প্লাটফর্মের ‘জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং নীরব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠকে শক্তিশালী করা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। 

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘হলফনামায় যে সম্পদের বিবরণ দেয়া আছে এবং ট্যাক্স রিটার্নেও একই সংখ্যা আছে। প্রার্থীদের সম্পদ যে ৫০০ গুণ বাড়ল উনি কি সেই ৫০০ গুণ কর দিয়েছেন। আইএমএফের শর্ত পূরণে কর আদায় করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ে ভালো উৎস আর কী হতে পারে। এখন দেখার বিষয় আগামী চার মাসে এনবিআর কী করে। কিন্তু দেখা যাবে কর এড়াতে প্রার্থীদের সবাই মাছচাষী ও মুরগির খামারি হয়ে গেছেন, যেখানে করহার অনেক কম। এটা এনবিআরের জন্য চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘ইশতেহারের বিষয়গুলো জনগণের কাছে আসে। আগের ইশতেহারকে কেন্দ্র করে যে মূল্যায়ন করার কথা ছিল সেটা হয়নি। আগামীতে যে প্রতিশ্রুতি দিলেন, সেটাও মূল্যায়ন করা গেল না। একটি রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে নির্বাচনী ইশতেহার এসেছে, যা নিয়ে কারো আগ্রহ নেই।’

সিপিডির এ সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘ইতিহাস বলে, যদি প্রথাগত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ত্রুটি ঘটে, তবে সেখানে নাগরিকের ভূমিকা আরো বেশি গুরুত্ব নিয়ে সামনে আসে। তখন বৈষম্য বাড়ে। নির্বাচন আসবে যাবে, কিন্তু যদি নির্বাচন মানুষের কল্যাণে না হয়, সে নির্বাচন জনগণের উপকারে আসবে না। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির অবস্থা যেখানে যাচ্ছে সেখানে সামনের অর্থনীতি কীভাবে মোকাবেলা করবেন?’

সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাতানো ও আত্মঘাতমূলক প্রতিযোগিতার নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অগণতান্ত্রিক শক্তি বিকাশের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। একচ্ছত্র ভুবন গড়ার এজেন্ডাকারীই এ সুযোগ করে দিচ্ছেন। এটা আমাদের সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই দায়ও সবাইকে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, যেটা রাজনীতি সেটাই ব্যবসা আর যেটা ব্যবসা সেটাই রাজনীতি। কাজেই ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে শুদ্ধাচার না করে আমরা আমাদের পলিসি ব্রিফের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব না। সরকারের বিভিন্ন প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমসহ সবার জন্যই এ পলিসি ব্রিফ।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা জাতিগত ও ধর্মীয় দিকে থেকে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী। কিন্তু অধিকারের আন্দোলনকে আমাদের জাতীয় আন্দোলন হিসেবে পরিণত করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য আমাদের অধিকতর মূল্য দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘হলফনামার তথ্য গোপনে নির্বাচন কমিশন ও দুদকের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগের সৎসাহস থাকলে তারা অনেক ব্যবস্থা নিতে পারত। তথ্য গোপন করার কারণে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারত। তথ্য যে গোপন হয়েছে তার দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। যার তথ্য গোপনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তিনিও তা মেনে নিয়েছেন। হলফনামা নিয়ে আমরা যেভাবে কথা বলছি তাতে পরবর্তী সংসদে নতুন সংশোধনীতে হলফনামা বাতিল করে দেয়ার প্রস্তাব আসতেও পারে। সেটা হলেও আমাদের সংগ্রাম করতে হবে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এর পরও ক্ষমতা নির্ধারিত হবে এবং পাকাপোক্ত হবে। অনেক বিদেশী শক্তি নাখোশ হবে, তারপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্যতার উন্নয়নের যাত্রা দীর্ঘায়িত হবে।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘মিডিয়া ব্রিফিংয়ে যেসব সুপারিশ এসেছে তার সবই প্রাসঙ্গিক। তবে এটা বাস্তবায়ন করতে যে পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট আছে সেখানে ঘাটতি রয়েছে। বৈষম্য বিলুপ্ত আইন নিয়ে কথা বলতে আমরা এখন বিব্রতবোধ করছি। যারা আইন প্রণয়ন করছে না তারা লজ্জা পাচ্ছে কিনা জানি না। আমরা ১০ বছর ধরে এ আইন নিয়ে কাজ করেছি। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এটা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পড়ে আছে।’

ব্রিফিংয়ে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং নীরব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠকে শক্তিশালী করা—এ তিনটি বিষয়ের ওপর আলাদা নিবন্ধ উপস্থাপন করে সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো তুলে ধরেন এমবি আকতার, ফারহান হোসেন ও আসিফ মোহাম্মদ।

আরও