অবশেষে ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের স্বপ্নের ট্রেন যাত্রা শুরু
হচ্ছে। ৭৮০ জন যাত্রী নিয়ে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের বিরতিহীন
ট্রেনটি আগামী ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে
প্রথম ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে।
ট্রেনটি চট্টগ্রামে যাত্রাবিরতি দিলেও বিরতিহীন হওয়ায় চট্টগ্রামের জন্য
কোনো আসন বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। মঙ্গলবার (২১নভেম্বর) সকালে ট্রেনটির বাণিজ্যিক চলাচলের
চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে রেল ভবন।
১০ দিন আগে থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেলেও নতুন চালু হতে যাওয়া এ ট্রেনের
টিকিট বিক্রি কার্যক্রম কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার রুটের জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে প্রথম ট্রেনের জন্য ছয়টি নাম
(প্রবাল এক্সপ্রেস, হিমছড়ি এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, ইনানী এক্সপ্রেস, লাবণী
এক্সপ্রেস ও সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেস) প্রস্তাবনা করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রথম ট্রেনের জন্য
কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামটি অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটির নম্বর রেলওয়ের পক্ষ
থেকে ৮১৩ ও কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনের নম্বর ৮১৪ নির্ধারণ করা
হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা বিলাসবহুল এ ট্রেনে ১৫টি কোচ থাকছে। এর
মধ্যে ছয়টি এসি কোচে ৩৩০টি সিট, সাতটি নন-এসি কোচে ৪২০টি সিট ও দুটি খাবার গাড়ির কোচে
৩০টি নন-এসি সিট রয়েছে। তবে ট্রেনটি ঢাকা থেকে
মঙ্গলবার এবং কক্সবাজার থেকে প্রতি সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে চলাচলরত আংশিক বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস
ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ট্রেন দুটি বিরতিহীন
হওয়ায় যাত্রীদের কাছ থেকে মোট ভাড়ার ১০ শতাংশ নন-স্টপ চার্জ রাখা হয়। তবে ডিসেম্বর মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার
নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে এ সংকট আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত
১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে পৌঁছবে। একইদিন দুপুর ১২টা ৪০
মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেসের রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার
পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথের সিঙ্গেল লাইন বসানোর কাজ শেষ হলেও এখনো প্রকল্পের ১৫
শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনের লুপ লাইনের কাজ, স্টেশন ও সিগনালিং এর কাজ
সম্পন্ন না হওয়ায় একই সময়ে উভয়মুখে দুটি ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি চালানো ট্রেনটি নন-স্টপ
হওয়ায় পথিমধ্যের স্টেশনগুলোতে স্বল্প লোকবল দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব। এজন্য নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ১ ডিসেম্বর থেকে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না। প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,
দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত রেলপথের গতিসীমা ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হলেও স্বাভাবিক
ভাবে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব। সর্বশেষ জিআইবিআর (সরকারি রেল পরিদর্শন) এর ইন্সপেকশনে
প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে এই রুটে ট্রেন চলাচলে সর্বোচ্চ গতি ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের
মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এ রুটে পর্যায়ক্রমে আরো সাত জোড়া আন্তঃনগর এবং কমিউটার ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া, ঢাকা থেকে আরো এক জোড়া এবং চাঁদপুর থেকে এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চলবে একাধিক কমিউটার ট্রেন। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী থেকেও এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।