ব্লিংকেনের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে: শাহরিয়ার আলম

শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে হুমকি বোধ করছেন বলে যে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সঙ্গে বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনোমিক কনফারেন্সে ব্লিংকেন এ কথা বলেছিলেন। যেখানে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে হুমকি বোধ করছেন বলে যে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সঙ্গে বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনোমিক কনফারেন্সে ব্লিংকেন এ কথা বলেছিলেন। যেখানে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বক্তব্যটা মোটেই বাংলাদেশ স্পেসিফিক নয়।

আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাক-নির্বাচনি কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি নতুন স্মারকপত্রে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর এ বিষয়ে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্যে বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের নাম উঠে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা পরবর্তী আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করব। যদি আমার স্মৃতি ভুল না করে থাকে, তাহলে কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন, ২০১০ সালে। তবে তিনি একা না, একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে তাদের মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, তৈরি পোশাক খাতে যে অরাজকতা হয়, সেটা খুবই টেম্পরারি নেচারের (অস্থায়ী প্রকৃতির)। হঠাৎ করেই এটা শেষ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পরে পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন কারখানাগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে, তখন কল্পনা আক্তারসহ আরো দু-একজন মিলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রেফতার হয়েছিলেন, যোগ করেন শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, ‘কাজেই কল্পনা আক্তার যেটা বলেছেন যে তিনি আমাদের বা অন্য কারো কাছ থেকে হুমকির শিকার হয়েছেন, এটার ব্যাখ্যা আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব। কল্পনা আক্তার খুবই সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ড কিংবা আপনারা যদি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এই কথা বলেছেন কিনা, বলে থাকলে কীসের ভিত্তিতে বলেছেন, তাকে এটা জিজ্ঞাসা করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের।

আরো বলেন, ‘কিন্তু তিনি যে হুমকির কথা বলেছেন, সেটা অতীতে বাংলাদেশে কাউকে বলেননি। অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, সেটা আমরা জানতে চাইব। পাশাপাশি একটি বিষয় পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, অ্যান্থনি ব্লিংকেন যে বৈঠকে এই কথা বলেছেন, সেটা হলো এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনোমিক কনফারেন্স। যেটাতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যোগদান করেছেন। কাজেই ব্লিংকেনের বক্তব্য মোটেই বাংলাদেশ স্পেসিফিক নয়।’

‘যেভাবে কিছু কিছু গণমাধ্যমে এসেছে। আই রিপিট, তার বক্তৃতা পুরো পড়বেন, তিনি বাংলাদেশ উল্লেখ করে কোন বক্তব্য দেননি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস নেতা বা কর্মী কল্পনা আক্তার। কান্ট্রি মেনশন করে দু-তিনটা আরো দেশের নাম বলেছেন কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু সেখানে মেনশন করেননি। এটা মোটেই গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প স্পেসিফিক কিছু ছিল না। এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শ্রম অধিকার আরো শক্তিশালী করতে, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে, আপনারা জানেন যে অনেক দেশে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে নারী কর্মীদের চেয়ে পুরুষদের বেতন কম, সেটা একটা বড় ন্যাশনাল ইস্যু সে দেশে। তারা একটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাকশন বা মেজার্স নিয়েছেন যেখানে তারা তাদের দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডরদের অথরাইজ করছেন লেবার রিলেটেড কোন ইস্যুতে সেই সব হোস্ট কান্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দূর এগিয়েছে। প্রায় বছরখানেক হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে। সেই নিয়োগ দেয়ার অনুমতি আমরা দিয়েছি, ফ্যাসিলিটেট করেছি। এজন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।’

কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি গ্রীষ্মে লন্ডন সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কমনওয়েলথের মহাসচিবের বৈঠক হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন যে পর্যবেক্ষক পাঠালে আপনাদের স্বাগত জানাব। তখন কমনওয়েলথ সেক্রেটারির কার্যালয়ের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন নিয়ে কাজ করা বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলদেশে অবস্থান করছেন। তারা নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে।

নির্বাচন কেন্দ্রিক বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা কিছু বলেছেন কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নির্বাচনকালীন একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থাকে, সেটা তারা জানেন। তারা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন। তারা এ বিষয়ে জানেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসতে পারে বলে সরকার আশা করে বলে দুইদিন আগে আপনি বলেছিলেন- এমন প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি দলের মুখপাত্র নই। আমি আশা করি। আমার দল আশা করে এমনটা বলিনি।

কীসের ভিত্তিতে এই আশার কথা বলেছেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করাতে তাদের যে কোনো কথা কিংবা আবেদন, বিদেশীদের কাছে আকুতি-মিনতি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এটা সার্বজনীন সত্য। তফসিল অনুসারে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। কাজেই সেই দিন পর্যন্ত নির্বাচনে আসাটা সবার জন্য উন্মুক্ত। সরে যাওয়ারও সুযোগও আছে।

কমনওয়েলথ প্রতিনিধিরা নিজেদের কোনো প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নাহ, এমন কিছু তারা বলেনি। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে কোনো একটি বিশেষ দলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। তবে সবার অংশগ্রহণ নির্বাচনের সৌন্দর্য বাড়ায়। আবার একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের দিয়ে কেবল শোভাবর্ধনের জন্য লোক দেখানোর প্রয়োজন নেই। এটা বাধ্যতামূলক কিছু না।

আরও